বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রক্তাক্ত পরিণতি

মির্জা মেহেদী তমাল

রক্তাক্ত পরিণতি

মুঠোফোনে পরিচিত হওয়ার পর পরকীয়ার টানে প্রথম স্বামীর সংসার ছেড়ে বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার জাহিদুর রহমান মৃধার সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন এক সন্তানের জননী নাদিয়া বেগম (২০)। তার সঙ্গে এক বছর সংসার করে অবশেষে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান নাদিয়া।

প্রায় তিন বছর আগে মাদারীপুরের মেয়ে নাদিয়ার সঙ্গে আগৈলঝাড়া উপজেলার মো. মনির হোসেনের (৩০) সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। স্বামী মনির হোসেনের ঢাকায় থাকার সুবাদে নাদিয়া বেগম সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করতেন। এরই মধ্যে মুঠোফোনের মিসকলের সূত্র ধরে নাদিয়ার পরিচয় হয় গৌরনদীর জাহিদুর রহমান মৃধার (২১) সঙ্গে। ফোনে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরকীয়ার একপর্যায়ে নাদিয়া স্বামীর ঘর ছেড়ে প্রেমিক জাহিদকে বিয়ে করে তার সঙ্গে সংসারজীবন শুরু করেন। পরে নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে দৈহিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় প্রেমিকার সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যা করে প্রেমিক। গত ১২ এপ্রিল রাতে শেফালি দুই সন্তান হৃদয় (৯) ও শিহাবকে (৭) নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ওই রাতেই শেফালির পরকীয়া প্রেমিক মোমেন তাদের ঘরে আসে। তারা দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে শেফালির বড় ছেলে হৃদয় ঘুম থেকে জেগে তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। পরে মোমেন শেফালির দুই সন্তানকে কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হৃদয় ঘটনাস্থলে মারা যায়। আর শিহাবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর সন্তান হত্যার দায়ে মা শেফালিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোমেন পালিয়ে গেলেও পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আড়াইহাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক জানান, শেফালির স্বামী আনোয়ার হোসেন প্রবাসী। শেফালি পাশের বাড়ির মোমেনের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তোলে। ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলির একটি বাসা থেকে সরকারি সারদাসুন্দরী মহিলা কলেজের এক শিক্ষিকা ও সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ওই কলেজশিক্ষিকার নাম সাজিয়া বেগম (৩৬)। তিনি সরকারি সারদাসুন্দরী মহিলা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি দুই ছেলে নিয়ে ওই বাসার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার স্বামী ঢাকায় ব্যবসা করেন। তাদের বাড়ি রাজধানীর সূত্রাপুর থানার বানিয়ানগর। নিহত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম ফারুক হাসান (৩৮)। তার বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলায় হলেও থাকতেন রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার ৩৮ নম্বর বাসায়। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ এ এফ এম নাসিম বলেন, তদন্তে নিহত শিক্ষিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সেটা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবু পরকীয়া! এ এক মরণনেশা! থামছেই না! পরকীয়ার ঘটনায় একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে নারী-পুরুষ। ভাঙছে সংসার। ভুক্তভোগী পরিবারের শিশুদের জীবনে নেমে আসছে অন্ধকার, দেখা দিচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। পরকীয়ার দুই ধারী তলোয়ারে রক্তাক্ত হচ্ছে সন্তানের তুলতুলে দেহ। ওপরের তিনটি ঘটনা পুরো দেশের চিত্র। মহামারি রূপ নিচ্ছে পরকীয়া নামক এই ব্যাধি। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, পারিবারিক আস্থার অভাব ও ভিনদেশি আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে বাড়ছে পরকীয়া নামক সামাজিক ব্যাধি। তা ছাড়া অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে সমানতালে। বিশেষ করে যেসব পুরুষ বা নারী বিদেশে অবস্থান করছে তাদের পরিবারের সদস্যরা পরকীয়ায় জড়াচ্ছে বেশি। এ ছাড়া সহকর্মীদের সঙ্গেও অনেকে জড়িয়ে পড়ছে পরকীয়া নামের কালো সুতোর বাঁধনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতার বিষয়ে তেমন আলোচনা নেই। নৈতিকতার অভাবে পরকীয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। একসময় প্রাণহানি হয়। এ ছাড়া যৌথ পরিবার প্রথা কমে যাওয়ায় একাকিত্ব থেকে পরকীয়া বেশি বাড়তে পারে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর