শুক্রবার, ২ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চাষির টাকা খরচ জঙ্গিবাদে

তিন এনজিওকে চিহ্নিত, ব্যবস্থার নির্দেশ

মাহবুব মমতাজী

জামায়াতে ইসলামীর তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের নামে আসা বিদেশি অনুদান যথাযথভাবে ব্যয় করা হতো না। বেশিরভাগ অর্থই ব্যয় হতো জঙ্গিবাদে। ইতিমধ্যে এই তিন প্রতিষ্ঠানের ৮ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই জামায়াত নেতা। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, গত রবিবার ১৮ জনকে আসামি করে রাজধানীর রমনা থানায় তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে সিআইডি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— বাংলাদেশ চাষি কল্যাণ সমিতি, নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন ও নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে আগের আরও ৪টি মামলা রয়েছে। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে একটি মামলা হয়। গত বছরের ৭ আগস্ট হবিগঞ্জ সদর থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা হয়। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রমনা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এবং ১৪ মে কাফরুল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাগুলো করা হয়। 

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, এসব প্রতিষ্ঠান চাষিদের উন্নয়নের কথা বলে বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। সেই অর্থ নিজেদের রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা, আত্মসাৎ এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যয় করত। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শুধু চাষিকল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্টে মোট ৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিদেশি অনুদান আসে। ২০১২-২০১৬ সালে মোস্তাক আহমেদ খাঁ তুরস্ক থেকে অর্থ এনে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে জঙ্গিবাদ বিস্তার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন করে। পরবর্তীতে তার নামে মামলা হলে সেসব অর্থ ফের বাংলাদেশ চাষিকল্যাণ সমিতির নামে আনা হতো। সূত্র জানায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিবাদ প্রচারণার অভিযোগে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মচারী ইসমাইল হোসেন ও নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী অফিসার হাসানুল বান্নাকে তার ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এ ঘটনার পরই অনুসন্ধানে নামে সিআইডি। সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার-২ এর সাবেক এমপি জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদের নির্দেশে বাংলাদেশ চাষিকল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্ট থেকে ৪২ লাখ টাকা নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেডে স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে গত বছরের ৩১ আগস্ট আরও ১০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। আবার চাষিকল্যাণের নামে বিদেশি অনুদান আনা হলেও তা চাষিদের জন্য ব্যয় না করে ইচ্ছামতো কিছু টাকা মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণে এবং কিছু টাকা জঙ্গিবাদ প্রচারণায় ব্যয় করা হতো। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফজলুল হক রিকাবদার, হুমায়ুন কবীর, আশরাফুল হক, আসগর হোসাইন, শেখ শাহজাহান কবীর, মনিরুল ইসলাম, আবদুর রউফ ও আল মামুন খন্দকারকে গ্রেফতার করা হয়। আর পলাতক দেখানো হয়েছে— আবদুল করিম, গোলাম রব্বানী, শেখ জিল্লুর রহমান আজমী, শেখ মুহাম্মদ মাসউদ, ড. সানাউল্লাহ, সিরাজুল হক, এস এম জাকির, নুরুল আমিন ফারুকি, হামিদুর রহমান আযাদ ও মোস্তাক আহমেদ খাঁকে। যদিও আদালত অবমাননা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হামিদুর রহমান আযাদ জেলহাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে আদালত সূত্র। জানা যায়, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ চাষিকল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। জামায়াত নেতা মরহুম মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ এর প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় কার্যক্রম জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলকে লিখিতভাবে অবহিত করা হতো। সেসব নথি এখন সিআইডির হাতে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, জামায়াতের এ তিন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মকাণ্ডের তদন্ত চলছে।

সর্বশেষ খবর