শুক্রবার, ২ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনা মূল্যে মিলছে ৩০ ওষুধ

ঝর্ণা মনি

কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনা মূল্যে মিলছে ৩০ ওষুধ

রাজধানীর মগবাজারের নয়াটোলার বাসিন্দা শামসুন নাহার বেগম (৫০)। রাত ৩টায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বাসার কাছেই কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, শামসুন নাহার বেগম স্ট্রোক করেছেন। চার দিন সেখানেই তার প্রাথমিক চিকিৎসা চলে। শামসুন নাহার বেগমের বড় মেয়ে গণমাধ্যমকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না বলেন, ‘মা এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকেই নিয়ে যাই। রক্তক্ষরণের পরিমাণ খুব বেশি ছিল। পরে বেটার চিকিৎসার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ওই রাতে কমিউনিটি ক্লিনিকই আমার মাকে বাঁচিয়েছে।’ শুধু শামসুন নাহার বেগমই নন, গত আট বছরে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন ৬৫ কোটিরও (এক ব্যক্তির একাধিকবার চিকিৎসাসেবা গ্রহণ) বেশি মানুষ। বিনা মূল্যে মিলছে ৩০ ধরনের জরুরি ওষুধ। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে সারা দেশে নীরবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। এ পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এসব ক্লিনিকে ১৩ হাজার ৮২২ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ নারী।

সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কমিউনিটি ক্লিনিকের অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা ১৯৯৬ সালে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছিলাম। সেখানে গ্রামের অসহায় নারী ও শিশুসহ বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও ওষুধ নিয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এসব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা আবার বন্ধ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করি। এখন প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ সেখানে চিকিৎসা পাচ্ছে। ৩০ প্রকার ওষুধ পাচ্ছে বিনা পয়সায়।’

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক এখন বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ৭১তম সম্মেলনেও কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রশংসা করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। এর আগে বিশ্বব্যাংক এটাকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছিল। তিনি বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবায় সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলেও এক হুকুমে কেউ যেন বন্ধ করতে না পারে সে জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। এর আওতায় ২০১৪ সাল থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা নেওয়ার হার ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। হামের টিকা গ্রহণের প্রবণতা দাঁড়িয়েছে ৮৬ শতাংশে। ইপিআই কর্মসূচির টিকা গ্রহণের হার ৮৮ শতাংশ। এসব সূচকের অগ্রগতির কারণে দেশের মানুষের গড় আয়ুও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭১ বছর।

এ ব্যাপারে কমিউনিটি ক্লিনিকের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ডা. মাগদুমা নার্গিস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসুখ-বিসুখে গ্রামীণ মানুষের ভরসা ছিল ওষুধের দোকান, হাতুড়ে ডাক্তার। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এখন তৃণমূলের মানুষ বিজ্ঞানসম্মত সেবা পাচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবার কারণে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু কমেছে। এটি দেশের জন্য, মানুষের জন্য বিরাট অর্জন। সরকারের এসডিসি-২০৩০ অর্জনে এই ক্লিনিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।

সর্বশেষ খবর