রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাহাড়ের অর্থনীতিতে সুবাতাস

মানিক মুনতাসির, পার্বত্য এলাকা থেকে ফিরে

পাহাড়ের অর্থনীতিতে সুবাতাস

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতিতে বইছে পরিবর্তনের সুবাতাস। প্রতিনিয়তই বিস্তৃত হচ্ছে পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা। নির্বিঘ্নে দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদচারণ বাড়ছে এ অঞ্চলে। দুর্গম পাহাড়ের ঢালে গড়ে তোলা  পিচঢালা পাকা পথে দিনরাত ছুটছে পর্যটকের গাড়ি। এ এলাকায় চোখে পড়বে পাহাড়ের চূড়ায় বসবাসকারীদের বাড়ির ছোট আঙিনাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ। ঘরে ঘরে হস্তশিল্প। মেয়েরা নানা ধরনের কাপড় বুনছেন। সেই সঙ্গে তৈরি করছেন পরিবারের ব্যবহার্য বিভিন্ন তৈজসপত্র। দুর্গম পাহাড়ে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি। ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা। চলছে টেলিভিশন। আবার সৌরবিদ্যুতের আলোয় জ্বলছে বাতি, চলছে টেলিভিশন। ফলে পাহাড়িদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। সুপেয় পানির সংকট কোথাও চোখে পড়েনি। পাহাড়ি মহল্লায় গড়ে উঠেছে সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিক, সরকারি স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনকি রাঙামাটির শুভলং এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের পানিবেষ্টিত বরকল এলাকায় ধামাইছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। বন বিভাগের অফিসের পাশেই গড়ে উঠেছে এলাকার বাজার। যেখানে গড়ে উঠেছে কাঠের তৈরি অসংখ্য দোকানপাট। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতির কারণে সব ধরনের কাজকর্মে প্রাণচাঞ্চল্য বেড়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা গহিন বন থেকে সংগৃহীত ফলমূলই ছিল একসময় সে এলাকার মানুষের একমাত্র খাদ্যপণ্য। কিন্তু সে চিত্র পাল্টে গেছে, পাহাড়ে পাহাড়ে গড়ে উঠেছে পর্যটন এলাকা। বিভিন্ন ধরনের রিসোর্ট। ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাবারের রেস্টুরেন্ট। রিসোর্টে রয়েছে রাতযাপনের ব্যবস্থা। ফলে নির্বিঘ্নে রাত কাটাচ্ছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকরা। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ায় বেড়েছে বিকিকিনিও। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির গহিন বনের ভিতরে পিচঢালা রাস্তা তৈরি হয়েছে গত কয়েক বছরে। ফলে নীলাচল, নীলগিরি, শুভলং ঝরনা, সাজেক, গুইমারাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে সেনাবাহিনী। বিশেষ করে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী বা বিশৃঙ্খলাকারীরা যেন কোনো পর্যটকের মনে ভীতির সঞ্চার করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে সর্বক্ষণ। সরেজমিন দেখা গেছে, পর্যটন, জুম চাষ, তাঁতবস্ত্র, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে চাঙা হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতি। চিরসবুজের ছোঁয়া পেতে পাহাড়ি জেলাগুলোয় পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। পাহাড়ে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে এখানকার পাহাড়ি-বাঙালি মানুষের রুটি-রুজিও। শীতের সময় পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হস্তশিল্পের তৈরি শোপিস, কোমর তাঁতের কাপড়সহ ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাগুলোর বেচাকেনাও জমে ওঠে। পর্যটকবাহী গাড়িগুলোসহ পরিবহন ব্যবসাও চাঙা হয়ে উঠেছে। পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচলের কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়ে, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের লেকের স্বচ্ছ জলে, ঝুলন্ত সেতু আর ক্যাবল কারে। সাঙ্গু নদে ডিঙি নৌকায় চরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। আর মেঘ পাহাড়ের নীলগিরি, জীবননগর, চিম্বুক, ক্যাওক্রাডং চূড়ায়। অন্যদিকে রাঙামাটি জেলার আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু, কাপ্তাই লেক, সাজেক ভ্যালি ও খাগড়াছড়ির আলুটিলা সুড়ঙ্গের মতো দর্শনীয় স্থানগুলোয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগের চেয়ে পার্বত্য অঞ্চলে সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে। রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর