রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রয়্যাল চিটিং ডিপার্টমেন্ট

মির্জা মেহেদী তমাল

রয়্যাল চিটিং ডিপার্টমেন্ট

রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা শরিফুল আলম। চারতলা ভবনের মালিক তিনি। নিচ তলায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছেন। লিটন নামে ওই ভাড়াটিয়ার সঙ্গে শরিফুল আলমের ঘনিষ্ঠতা হয়। লিটন মাঝে মধ্যেই শরিফুল ইসলামের ফ্ল্যাটে গিয়ে কথা বলতেন। শরিফুল একদিন লিটনকে জানান, ধানমন্ডিতে তার ৫ কাঠা জমি আছে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তিনি ওই জমি বিক্রি করতে চান। লিটন তাকে বলেন, তার অফিসের বস জানতে পারলে হয়তো জমিটা কিনবে। দুদিন পর লিটন শরিফুলকে বলেন, তার বস জমি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। একদিন বিকালে তারা শরিফুলকে কাগজপত্র নিয়ে উত্তরার একটি রেস্টুুরেন্টে আসতে বলেন। শরিফুল সেই রেস্টুুরেন্টে যান। সেখানে লিটনসহ আরও ৩ জন ছিলেন। লিটন তাদের সঙ্গে শরিফুলকে পরিচয় করিয়ে দেন। লিটনের বসের প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন। তাদের সঙ্গে জমি  কেনাবেচা সংক্রান্ত প্রাথমিক আলোচনা হয়। কাগজপত্র  দেখার পর লিটন বলেন, বসের প্রতিনিধি কাগজপত্র দেখে সন্তুষ্ট হয়েছেন। জমিটি কিনবেন। বসের সঙ্গে আলোচনা করে আপনাকে বিস্তারিত জানাব।’ জমি কিনতে লিটন ও অন্যরা শরিফুলের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিতে থাকে। বসের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেয় তারা। বিশ্বস্ততা অর্জনের পর একদিন শরিফুলকে বলেন, ‘গাজীপুরের ডাইভারশন রোডে জনৈক বারেকের ৩২ শতাংশ জমি আছে। এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা হলেই জমিটি কেনা সম্ভব। আমরা দুজন মিলে জমিটি কিনলে আমার বসের কাছে দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব। এতে যে লাভ হবে তার অর্ধেক আপনি আর অর্ধেক আমি নেব।’ লিটনের এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান শরিফুল। পরে শরিফুলকে লিটন বলেন, ‘বারেককে বায়না বাবদ অন্তত ৩২ লাখ টাকা দিতে হবে। আপনি ১৬ লাখ টাকা দেন। আমি ১৬ লাখ টাকা দিই। ১৫ দিনের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করলে বারেক জমি রেজিস্ট্রি করে দেবে।’ সে অনুযায়ী তারা উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে বসে লিটনের মাধ্যমে বারেককে শরিফুল ১৬ লাখ টাকা এবং ২২ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। পরদিন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনের রাস্তায় গাড়িতে বসে ১০ লাখ ৪১ হাজার টাকা দেন শরিফুল। এরপর থেকেই লিটন ও বারেক লাপাত্তা। তখনই শরিফুল বুঝতে পারেন, তিনি বড় ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। অভিনব কায়দায় এবং মোটা অঙ্কের প্রতারণা করে বলে এ ধরনের প্রতারণায় জড়িত গ্রুপ ডিবির কাছে রয়্যাল চিটিং ডিপার্টমেন্ট (আরসিডি) নামে পরিচিত। ডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে আরসিডির ৫ শতাধিক সদস্য সক্রিয় আছে। আরসিডির সদস্যরা জমি, কঙ্কাল, কয়েন, মূর্তি, ম্যাগনেট পিলার, সাপের বিষ এবং তক্ষক বিকিকিনিসহ নানা কায়দায় প্রতারণা করে। তাছাড়া হ্যালো বিজনেস, আমদানি-রফতানির ব্যবসা এবং মোবাইল ফোনে নামি-দামি লোকের পরিচয়েও প্রতারণা করছে আরসিডির সদস্যরা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর এসআইএন্ডও, অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের সদস্যরাও এ ধরনের প্রতারকদের সন্ধান পেয়েছে। পিবিআই সূত্রে জানা যায়, ধানমন্ডি সিটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক মো.  রেজাউল করিম এর কাছে জমি বিক্রি করার কথা বলে ভুয়া জমির মালিক ও ক্রেতা সেজে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পিবিআই তদন্ত করার পর অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের হোতা শহীদুলকে গ্রেফতার করে। পিবিআই জানায়, চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর  যোগসাজশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের টার্গেট করে তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন  দেখিয়ে তাদের নিকট হতে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে  নেয়। ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করায় প্রতারণার শিকার  কেউই তাদের খুঁজে পায় না এবং এভাবেই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর