সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম আর নেই

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম আর নেই। গতকাল বিকাল পাঁচটার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরায় এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে ভোগছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ফুসফুসে ইনফেকশন, কিডনি জটিলতাসহ নানা জটিল রোগে  ভোগছিলেন। তার ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বিকাল পাঁচটার কিছু পর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আব্বু আর নেই’। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। দলটি আজ সারা দেশে ‘শোক দিবস’ ঘোষণা করেছে। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও অনুসারী রেখে গেছেন। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

তরিকুল ইসলামের স্বজনরা জানান, কিডনি সমস্যার কারণে নিয়মিত ডায়ালাইসিস দিতে হতো তরিকুল ইসলামকে। গতকাল ডায়ালাইসিস করার সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দুপুরের দিকে চিকিত্সকরা জানান, ডায়ালাইসিস করার সময় তার হার্টে সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এরপর বেলা দেড়টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্ট নেওয়া হয়। বিকাল ৫টার দিকে তিনি মারা যান।  তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা এ্যাপেলো হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতালের সামনে নেতা-কর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। অনেকে গুমরে গুমরে কাঁদতে থাকেন। সেখানে মর্মস্পর্শী অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলতে থাকেন, বিএনপি একজন অভিভাবক হারাল। আজ এই দুঃসময়ে তার মতো অভিভাবকের থাকা খুবই প্রয়োজন ছিল।  তরিকুলের মরদেহ রাতে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে হিমঘরে রাখা হয়। 

বিএনপির সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, তরিকুল ইসলামের জানাজা আজ সকাল ১০টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর  সোয়া এগারোটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে মরদেহ যশোরে নেওয়া হবে। সেখানে যশোর ঈদগা মাঠে বাদ আসর জানাজা শেষে কারবালা কবরস্থানে তরিকুল ইসলামকে দাফন করা হবে। চারদলীয় জোট সরকারের তথ্য ও পরিবেশমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম যশোর সদর আসন থেকে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারেও তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ, পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যমন্ত্রী ছিলেন। যশোর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তরিকুল ইসলাম। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মওলানা ভাসানীর অনুসারী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের মধ্যে অন্যতম নেতা তরিকুল ইসলাম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। এ ছাড়াও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সহসভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তরিকুল ইসলাম দলের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত তরিকুল ইসলাম দলের বিভিন্ন সময়ে দুর্দিনে শীর্ষ নেতৃত্বের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন বলে তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি ব্যাপক শ্রদ্ধেয় ও আস্থাভাজন।

শোক : তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণদল, ন্যাপ ভাসানীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন শোক বার্তা দিয়েছে। 

 

সর্বশেষ খবর