সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
মোটরবাইক গ্যাংস্টার গ্রুপ

চাঁদা না দেওয়ায় গুলি, গ্রেফতার ৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওদের মোটরবাইকের ভোঁ ভোঁ বিকট শব্দে আতঙ্কগ্রস্ত সাধারণ মানুষ। প্রভাবশালী ও ধনীর দুলাল হওয়ায় অনেকে ওদের নিয়ে কথা বলারও সাহস পায় না, নীরবে তাদের আবদার পূরণ করে যায়। এই গ্যাংস্টারদের বিষয়ে থানা পুলিশের আচরণও অনেকটা রহস্যজনক। এবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে চাঁদা না দেওয়ায় গুলি করেছে ‘বাইকার গ্যাংস্টার’ গ্রুপের সদস্যরা। পরে র্যাব-৩ এর সদস্যরা শনিবার গভীর রাতে খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্যাংস্টার গ্রুপের আট সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো— মেহেদী হাসান (২২), শাহরিয়ার (২২), কাজী ইউসুফ বিন শওকাত ওরফে অনিক (১৯), আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন (২০), আবু হুরায়রা আদিব (১৮), সাব্বির হোসেন (১৮), শিশির আহম্মেদ ওরফে সজল (২২) ও মাজহারুল ইসলাম ওরফে অনিক ইসলাম (২১)। জানা গেছে, শনিবার রাত ৮টার দিকে খিলগাঁও তালতলা ‘চায়ের বাড়ি’ ফাস্টফুডের সামনে বাইকার গ্যাংস্টারের সদস্যরা জমায়েত হয়। সেখান থেকে ২০-২৫টি মোটরসাইকেলে শোডাউন করে তারা খিলগাঁও তালতলা মেম্বারগলিতে যায়। মনির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর ২৭৫/বি নম্বর বিকাশ অ্যান্ড লন্ড্রি নামের দোকানে ঢুকে তারা বিকাশ ক্যাশ আউটের কথা বলে। দোকানি মনির ক্যাশ খুলতেই তারা সব টাকা ছিনিয়ে নেয়। একই সঙ্গে গ্যাংস্টারের এক সদস্য তত্ক্ষণাত্ দোকানি মনিরের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা মনিরের হাতে ছুরিকাঘাত করে। একপর্যায়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে তারা দোকান লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কিছু সময় পর ঘটনাস্থলে র্যাব-৩ এর সদস্যরা গিয়ে তিনটি গুলির খোসা, একটি ডামি পিস্তলসহ তিনটি মোটরবাইক জব্দ করেন। পরে মেজর গালিব মোহাম্মদ নাতিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাইকার গ্যাংস্টার গ্রুপের আট সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে মেজর গালিব এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, হিরোইজম ও থ্রিল থেকে এসব কিশোর ছিনতাই, মাদক বাণিজ্য, মাদক বহন, মাদক সরবরাহকারী, মাস্তানি, দাদাগিরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার আগেও আমাদের কাছে গ্যাংস্টার গ্রুপের বিষয়ে বেশকিছু তথ্য ছিল।’ তিনি বলেন, রাব্বি ওরফে পাঁঠা রাব্বি ও অদিতের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাইক গ্যাংস্টার গ্রুপ ‘রোড রাইডার্স’, ‘ক্রাশবিডি’ ইত্যাদি পরিচয়ে এলাকায় এক বছর ধরে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। ‘ক্রাশবিডি’ গ্রুপ বাইকস্ট্যান্ডের নাম করে দলে সদস্য জোগাড় করে এবং পরে ৩০-৪০ জনের বিশাল বাহিনী নিয়ে শোডাউনের নাম করে ছিনতাই, দস্যুতা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করে। এই গ্রুপটি পুরান ঢাকার ‘বার্ন রাইডার্স’ গ্রুপের সঙ্গে মোটরসাইকেল শোডাউন করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তারা খিলগাঁও, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও পুরান ঢাকার খান রাসেল গ্রুপ, শাহজাহানপুরের ইমন গ্রুপ, গোড়ানের হাওয়াই গলির মুজিবুর রহমান রানা, গোড়ান ঝিলপাড়ের ছিনতাইকারী মেহেদী গ্রুপ ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। ভুক্তভোগী মনির জানান, এই গ্রুপের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় সক্রিয়। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

 

সর্বশেষ খবর