বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মায়াজালে সর্বনাশ

মির্জা মেহেদী তমাল

মায়াজালে সর্বনাশ

স্কুলে যাওয়া-আসার পথে স্কুলছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ইমরান শেখ। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন মেয়েটিকে ইমরান তাদের বাসায় নিয়ে যেতে চায়। মেয়েটি সরল বিশ্বাসে ইমরান শেখের বাসায় যায়। সেখানে ইমরান তাকে ধর্ষণ করে। পুরো ঘটনাটি রেকর্ড করে রেখে দেয় সে। পরবর্তীতে ইমরান শেখ মেয়েটির পরিবারের কাছে ভিডিওর কথা ফাঁস করে। ইমরান তাদের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। মেয়েটি এসব শুনে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ঘটনাটি রাজবাড়ী এলাকার। এ ব্যাপারে রাজবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুমিল্লার চান্দিনায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পৌরসভার পূর্ব বেলাশহর এলাকার ঘটনা এটি। স্থানীয় মজনু মিয়ার মেয়ে চান্দিনার ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা আক্তারকে (১৪) প্রেমের ফাঁদে ফেলে বখাটে প্রেমিক শাকিল। শাকিল সানজিদাকে নিয়ে পাশের আবদুর রব মিয়ার ৪তলা ভবনের ছাদে ওঠে। সেখানে প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সেখান থেকে সানজিদা ওঠার চেষ্টা করলে তাকে মারধর করে শাকিল। প্রায় ২-৩ ঘণ্টা ধরে মেয়েকে না দেখে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে শুরু করে তার পরিবার। খোঁজ নিয়ে ওই বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে নিজের মেয়েকে বিবস্ত্র অবস্থায় প্রেমিক শাকিলের সঙ্গে দেখতে পায় মা ফরিদা বেগম। মাকে দেখে বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সানজিদা। কিন্তু সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু ঘটে তার। ধর্ষণের পর তাকে কীটনাশক খাওয়ানো হয় বলে পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে। এমন ঘটনা ঘটছে সারা দেশে অহরহ। প্রেমের ফাঁদে পড়ে কেউ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কেউ আবার খুনের শিকার। অনেকেই এসব থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। প্রেমিক প্রতারকরা কখনো বেড়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ আবার কখনো খুন করছে। আবার অপহরণ করে টাকা চাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে হর হামেশা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্ধুর প্রতি সরল বিশ্বাসের কারণে একবারের জন্যও মেয়েরা ভাবছেন না তাদের বিপদের কথা। নির্দ্বিধায় বন্ধুর ফেলা টোপে পা দিয়ে বিপদে পড়ছেন। বন্ধু হিসেবে আপনি যার সঙ্গে মিশছেন সে কী প্রতারক কিনা তা বোঝার কিছু লক্ষণ আছে। সেগুলো ভালো করে লক্ষ রাখা দরকার। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন,  আপনার বন্ধু কোথায় থাকে তা জানা আছে তো আপনার? যদি না থেকে থাকে তাহলে আজই জানার চেষ্টা করুন। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধুরূপী প্রতারকরা তাদের পরিবার কিংবা ঠিকানা সম্পর্কে কিছুই জানাতে চায় না। বলেন, প্রতারক প্রেমিক খাবারের বিল, রিকশা ভাড়া, আইসক্রিম খাওয়ার টাকা সব কিছুই প্রেমিকার ওপর নির্ভর করে থাকে। ‘মানিব্যাগ আনতে ভুলে গেছি’ কিংবা ‘খুচরা টাকা নেই’ অজুহাত দেখিয়ে থাকে। এ ধরনের বন্ধুরা সাধারণত প্রতারক হয়ে থাকে। আড্ডায় একা আসতে বলা কিংবা সব সময়ই একা দেখা করতে বললেও সাবধান হওয়া জরুরি। প্রেমিক বন্ধুটি শুধু নিজের সময় সুযোগ মতোই সময় দিয়ে থাকে। রূপধারী প্রতারকরা সাধারণত স্বার্থপর আচরণ করে। প্রতারকের অতিরিক্ত মিষ্টি কথায় ভুলে গেলে চলবে না। মন ভোলানোর জন্য বন্ধুটি অতিরিক্ত মিষ্টি কথা বলার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, প্রেমিক যদি আপনাকে নিয়ে খুব নির্জন স্থানে সময় কাটাতে চায় কিংবা বাড়ি থেকে পালিয়ে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে চায় তাহলে অবশ্যই বন্ধুরূপী প্রতারককে এড়িয়ে চলবেন। কারণ বিপদে পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এক্ষেত্রে আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর