বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনী বছরে শেয়ারবাজারে নানা প্রণোদনা

লক্ষ্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো

আলী রিয়াজ

নির্বাচনী বছরে টেনে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে শেয়ারবাজার। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নানা প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) দুই হাজার কোটি টাকার মিউচুয়াল ফান্ড (তহবিল) অনুমোদনের পাশাপাশি চীনের দেওয়া ৯০০ কোটি টাকা তহবিলকে বিনিয়োগের শর্তে কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নেওয়া হচ্ছে এসব পদক্ষেপ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রণোদনা সুযোগ সন্ধানীদের পকেটে না যায় সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে বাজার উন্নয়নে শুধু প্রণোদনা নয়, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর কাজ করা উচিত। জানা গেছে, সরকার সম্প্রতি আইসিবিকে দুই হাজার কোটি টাকার মিউচুয়াল ফান্ড অনুমোদন দিয়েছে। তহবিলের ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে। আবার যেসব ব্যাংক এই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবে, তাদের বিনিয়োগের এই অংশটুকু শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখা হয়েছে। এতে কোনো ব্যাংক এই তহবিলে ৫০০ কোটি টাকা দিলেও শেয়ারবাজারে ওই ব্যাংকের যে বিনিয়োগ আছে, তার সঙ্গে এটি যোগ হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে চীনের দুই প্রতিষ্ঠানের কেনা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২৫ শতাংশ শেয়ারের দাম হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে ৯০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এই টাকা ডিএসইর সদস্যরা পেয়েছেন। প্রত্যেক সদস্য তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা পেয়েছেন। এই টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের শর্তে তিন বছরের কর অব্যাহতি চেয়েছেন তারা। এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে উৎসে কর ১৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বাজারে তালিকাভুক্ত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আরও ১০ বছর বাড়িয়েছে বিএসইসি। কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরাও। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ লগ্নিকারীও এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সরকারের এসব পদক্ষেপের প্রভাব এখনো দেখা না গেলেও দ্রুত বাজার চাঙা হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েকদিন ধরে দরপতনই হয়েছে শেয়ারবাজারে। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারে মূল সংকট হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। সুশাসনে ঘাটতি থেকেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই আস্থা অর্জন জরুরি। ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টসহ সব আইনকানুন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, কারসাজির মাধ্যমে কেউ পুঁজি হাতিয়ে নিলে অবশ্যই তার শাস্তি হবে। এ ছাড়া বাজারে ভালো শেয়ার সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। তা না হলে নতুন বিনিয়োগ আসবে না। শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজার অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমানে দেশে অস্থিরতা নেই, কিন্তু উৎকণ্ঠা আছে। নির্বাচন সামনে রেখে আবার রাজনীতি অস্থির হওয়ার আশঙ্কা আছে। এতে বিনিয়োগ আস্থা পাবে না। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা কম। সবকিছু মিলে রাজনীতি স্থিতিশীল না হলে শেয়ারবাজারে তেমন কোনো উন্নতি আশা করা যায় না।

সর্বশেষ খবর