শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হিমঘরে রাজধানীর সিটিং সার্ভিস

এক বছর পার হলেও আসেনি কোনো নীতিমালা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

হিমঘরে রাজধানীর সিটিং সার্ভিস

রাজধানীর আগারগাঁও থেকে বাড্ডা লিঙ্ক রোডে আলিফ পরিবহনের একটি বাসে আসছিলেন আকবর নামে এক যাত্রী। তার কাছে বাসের সুপারভাইজার ৩০ টাকা ভাড়া চাইলে তিনি ২০ টাকা দিতে রাজি হন। আগারগাঁও থেকে মহাখালী ১০ টাকা এবং মহাখালী থেকে বাড্ডা লিঙ্ক রোড ১০ টাকা। কিন্তু সিটিং সার্ভিসের লোগো দেখিয়ে ৩০ টাকা ভাড়া দাবি করেন সুপারভাইজার। অথচ ওই সময়েও বাসে পাঁচজন যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে বাড্ডা লিঙ্ক রোডে বাস থামিয়ে ওই যাত্রীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন বাসের সুপারভাইজার ও হেলপার। গতকালের এ চিত্র প্রায় প্রতিটি রুটে প্রতিনিয়ত ঘটলেও সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য চলছেই। এ নৈরাজ্য নিরসনে কমিটি গঠন করে সুপারিশমালা তৈরির এক বছর পার হলেও আসেনি কোনো নীতিমালা কিংবা ভাড়ার তালিকা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গত বছরের ৩ মে সিটিং সার্ভিসের এ নৈরাজ্য নিরসনে ‘সিটিং সার্ভিসসহ সুষ্ঠু যাত্রীসেবা’ নামে আট সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়। বিআরটিএ পরিচালক শেখ মাহবুব ই রব্বানীকে প্রধান করে পেশাজীবীদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত হয়েছিল। সিটিং সার্ভিস থাকবে কিনা তা জানিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে কমিটিকে বলা হয়। নির্ধারিত সময় পার করে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে গত বছরের নভেম্বরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি ১০টি সুপারিশ করলেও তার বাস্তবায়নে নীতিমালা প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। আর তাদের অবহেলার সুযোগ নিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে চলেছেন সিটিং সার্ভিস নামধারী পরিবহন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবেদনের ব্যাপারে বিআরটিএ  পরিচালক শেখ মাহবুব ই রব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সিটিং সার্ভিস চালু রাখার সুপারিশ করেছি। তবে সিটিং ও নন সিটিং গাড়ির রং আলাদা করতে হবে। মানুষ যেন দূর থেকে দেখলেই বুঝতে পারে গাড়ি সিটিং কিনা। পাশাপাশি সিটিং সার্ভিসের ভাড়া ও রুট নির্ধারণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, গণপরিবহনের মালিকানা থাকবে চার-পাঁচটি কোম্পানির হাতে। সিটিং সার্ভিসের স্টপেজ আলাদা থাকবে। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানো যাবে না। এর সঙ্গে ট্রাভেল কার্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে যাত্রী কার্ড রিচার্জ করে বাসে যাতায়াত করতে পারবেন। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগাতে হবে। এতে কেউ নিয়ম ভঙ্গ বা কোনো অপরাধ করলে তাকে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা যাবে। এ ছাড়া বিআরটিএর নতুন কিছু ডবল ডেকার নামানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এতে কম গাড়িতে বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে। তবে ভাড়া কোন রুটে কত হবে তা নির্ধারণ করবে বিআরটিএ। শেখ মাহবুব ই রব্বানী আরও বলেন, ‘বিআরটিএর কাছে আমরা সুপারিশ করেছি। কিন্তু সিদ্ধান্ত কবে নেওয়া হবে এবং কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা আমার জানা নেই। এজন্য আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে বিআরটিএর প্রতিনিধি ও পুলিশ কমিশনার রয়েছেন। তারা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন।’

এ ব্যাপারে ডিএমপির ট্রাফিক (দক্ষিণ) বিভাগের যুগ্ম-কমিশনার (সম্প্রতি পদোন্নতিপ্রাপ্ত ডিআইজি) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা রাজধানীতে ১৩০টি বাস স্টপেজ নির্ধারণ করে দিয়েছি। যাত্রীছাউনি বা স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানোর ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছি। কিন্তু গাড়ির রুট পারমিট বা ভাড়ার বিষয়টি বিআরটিএ দেখে। আমরা সড়কের শৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’ কর্তৃপক্ষের ঠেলাঠেলিতে আটকে রয়েছে সুষ্ঠু যাত্রীসেবা। সিটিং সার্ভিসসহ সুষ্ঠু যাত্রীসেবা কমিটির সুপারিশ হিমঘরে পাঠিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে ব্যবসা করছেন সিটিং সার্ভিস নামধারী অসাধু পরিবহন শ্রমিকরা।

সর্বশেষ খবর