মিরপুর রূপনগর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। রূপনগরের খালি জমিটি তিনি ডেভেলপারকে দিয়েছেন। সেখান থেকে পেয়েছেন তিনটি ফ্ল্যাট। এক সন্তানের জনক শাহজাহানের অবসরকালীন জীবন কাটছিল ভালো। হঠাৎ তার তিনটি ফ্ল্যাটের দুটি ফাঁকা হয়। এক মাস কোনো ভাড়াটিয়া না পাওয়ায় শাহজাহান পত্রিকায় ‘ফ্ল্যাট ভাড়া’র একটি বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর হাবিব নামে এক ব্যক্তি শাহজাহানকে ফোন দেন। তিনি ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে চান। ফ্ল্যাট দেখেন। পছন্দ করেন। ভাড়া নেন। ভাড়াটিয়া হাবিবের সঙ্গে শাহজাহানের কথাবার্তা হয়। আলাপচারিতায় হাবিব জেনে নেন শাহজাহানের আদ্যোপান্ত। অবসর সরকারি কর্মকর্তা শুনে হাবিব বেশ উত্ফুল্ল। হাবিব তাকে বলেন, আপনার মতো লোক আমাদের প্রয়োজন। হাবিবের এ কথার মর্ম প্রথমে বুঝতে পারেননি শাহজাহান।
হাবিব একদিন শাহজাহানকে জানান, তার বন্ধু জাহাঙ্গীর আলমের জমি আছে ধামরাইয়ে। ৫৮ শতাংশ জমি তারা কিনতে পারলে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে জাহাঙ্গীর জমিটি বিক্রি করতে চাচ্ছেন বলেই এত অল্প দামে বিক্রি করছেন। দুজনে মিলে টাকা খাটাতে পারলে প্রায় কোটি টাকা লাভ হবে। প্রথমে না করলেও পরে রাজি হন শাহজাহান। হাবিব তাকে বলেন, তার পরিচিত লোক পরে জমিটা কিনবে। একদিন বিকালে হাবিব শাহজাহানকে একটি রেস্টুরেন্টে যেতে বলেন। সেখানে ছিলেন তাদের আরেক লোক সাব্বির আহমেদ। হাবিব পরিচয় করিয়ে দেন ব্যবসার পার্টনার হিসেবে। এই সাব্বির পরবর্তীতে লাভসহ টাকাটা ফেরত দেওয়ার কথা। তাদের কথা মতে, নগদ এক লাখ টাকা প্রথমে তাদের হাতে তুলে দেন শাহজাহান। পরে এফডিআর ভাঙিয়ে আরও ৪০ লাখ টাকা তুলে দেন হাবিবের হাতে। পরের দিন যোগাযোগ করার কথা থাকলেও তারা আর যোগাযোগ করেনি। তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে শাহজাহান বলেন, আমি সম্মোহিত হয়ে পড়েছিলাম। কারও কাছে কোনো পরামর্শ ছাড়াই তুলে দিয়েছি টাকা প্রতারক চক্রের হাতে। এ ব্যাপারে র্যাব এবং কাফরুল থানায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু সেই প্রতারক চক্রের সন্ধান পাইনি। পুলিশ জানায়, এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ ধরছে। এরপরও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। প্রতারক চক্রের টার্গেট থাকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এককালীন কিছু টাকা পেয়ে থাকেন। সেসব টাকা সাধারণত এফডিআর করে রাখেন তারা ব্যাংকে। সেই টাকার ওপর টার্গেট থাকে প্রতারকদের। যে কারণে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবশ্যই আরও সচেতন হওয়া জরুরি।