বৃহস্পতিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

মাদারীপুরে কুণ্ডু বাড়ির মেলা

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

মাদারীপুরে কুণ্ডু বাড়ির মেলা

মাদারীপুরের কালকিনিতে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ির মেলা। প্রতি বছর কালিপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় মেলার। প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা এ বছর চাঁদাবাজির কারণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে। মেলায় দোকান বরাদ্দকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে আবির নামে এক যুবক খুন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঠের আসবাবপত্রের সমারোহ ঘটে এ মেলায়। এতে মাদারীপুর ও এর আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার লোকের ঢল নামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার গোপালপুরের কুণ্ডুবাড়িতে দীপাবলি ও কালিপূজা উপলক্ষে দীননাথ কুণ্ডু ও মহেশ কুণ্ডু এ মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুণ্ডুদের বংশের নামানুসারে মেলার নাম হয় কুণ্ডুবাড়ির মেলা। সে সময় চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, জারি গান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন করা হতো।কালের বিবর্তনে পালাগান, জারি গান, নৌকাবাইচ বন্ধ হয়ে গেছে।

 বংশ পরম্পরায় প্রতি বছর এ মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এ মেলা বিখ্যাত। মেলায় মাদারীপুর ছাড়াও বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মালামাল বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই মেলা চলবে আরও এক সপ্তাহ।

তবে এ বছর মেলার দোকানিদের কাছ থেকে ভিটি ভাড়া, শ্রমিক মজুরি, ধর্মীয়ফান্ডসহ বিভিন্ন নামে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের চাঁদা। শরীফুল ইসলাম নামে ফার্নিচার দোকানি জানান, ‘আমাদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। আমরা বগুড়া থেকে এসেছি। না দিয়েও উপায় নেই। আমরা এদের কাছে এখন জিম্মি। তারা বলে দিয়েছে দোকান করতে হলে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এই মেলায় আগের সেই ঐতিহ্য নেই। প্রভাবশালীরা মেলায় দোকান বরাদ্দের নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে। মেলায় পাঁচ শতাধিক দোকান বসে। এসব দোকান থেকে প্রভাবশালীরা কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা আদায় করে। প্রতি বছরের তুলনায় এবার কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা কম রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে দু-এক দিন পরে মেলা জমে উঠলে বিক্রি বাড়বে। মেলার এক দোকানি সেলিম হাওলাদার জানান, ১০ বছর ধরে মেলায় আসবাবপত্র বিক্রি করছি। মেলা কমিটির সভাপতি ভজন কুণ্ডু জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষ মাত্র চার একর জমির ওপর এ মেলার আয়োজন করেন। পরে ধীরে ধীরে এই মেলা বিস্তৃত হয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর এই মেলায় কমপক্ষে কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়। তবে তিনি চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করেন। কালকিনি থানার ওসি মোফাজ্জল হোসেন জানান, মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

সর্বশেষ খবর