শুক্রবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকা লিট ফেস্টশুরু

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

ঢাকা লিট ফেস্টশুরু

শাস্ত্রীয় সংগীতের মূর্ছনায় কত্থক নৃত্যের তালে তালে গতকাল সকালে বাংলা একাডেমির আবদুুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শুরু হয়েছে তিন দিনের ঢাকা লিট ফেস্ট-২০১৮। এর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উৎসবে আনন্দমুখর পরিবেশ থাকলেও আয়োজকরা জানান বাকস্বাধীনতার শঙ্কার কথা।

এদিকে লিট ফেস্টকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির সবুজ চত্বর, মিলনায়তন ও লন আলোকিত হয়ে উঠেছে বিশ্বসাহিত্যের দিকপালদের নিয়ে। ১৫ দেশের তিন শতাধিক সাহিত্যিক, অভিনেতা, রাজনীতিক, গবেষক এবং বাংলাদেশের প্রায় দেড় শ লেখক, অনুবাদক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ তিন দিনের এ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ ও আহসান আকবার। উদ্বোধক আসাদুজ্জামান নূর এ সময় বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালে তিনি অগ্রাহ্য করেন। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিকদের এ মিলনমেলায় আমি কীভাবে যাই।’ এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করলে তিনি একটি শর্ত দেন। তিনি বলেন, ‘সেখানে কবি জসীমউদ্দীন, চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ও প্রফেসর আবদুল মতিন চৌধুরীকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভিটি ও জ্ঞানের ওপর বিশ্বাস করেন। ঠিক এমনটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি সব সময় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঢাকা লিট ফেস্টের অংশ হতে পেরে গর্বিত। আমি ঢাকা লিট ফেস্টের সাফল্য কামনা করি। এরপর ফিতা কেটে তিনি আসরের উদ্বোধন করেন। এ সময় ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক, অভিনেত্রী নন্দিতা দাস ও পুলিত্জার বিজয়ী লেখক অ্যাডাম জনসন তার সঙ্গে ছিলেন। সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ আয়োজনের পরিচালকরা। লিট ফেস্টের পরিচালক বাংলা ট্রিবিউন প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে বাকস্বাধীনতা হরণের একটি চেষ্টা হচ্ছে। ঢাকা লিট ফেস্ট সব সময় মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ঢাকা লিট ফেস্ট বরাবরই নারী, রোহিঙ্গা ইস্যু ও বাকস্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে। সংস্কৃতির প্রতি বাংলাদেশ সরকারের অগণিত সমর্থনের কারণে আমরা অষ্টমবারের মতো এ আয়োজন করতে পারছি। ঢাকা লিট ফেস্টে কেউ কথা বলতে বাধার সম্মুখীন হয় না। খোলামেলা আলোচনা করার জন্য এটা একটি মুক্ত জায়গা।

ফেস্টের আরেক পরিচালক সাদাফ সায্ বলেন, যেখানে বিশ্বের সব জায়গায় মুক্তচিন্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে, সেখানে এ রকম আয়োজন করতে গেলে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ ধরনের আয়োজনে আমরা যেসব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করব তা বিশ্বের কোথাও হয়তো একত্রে করা সম্ভব নয়। নারী ইস্যু, হ্যাশট্যাগ মিটু, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা বিষয়ে আলোচনায় উঠে আসবে বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা। ঢাকা লিট ফেস্টের ধারণাটি অনেক শক্তিশালী বলে আমি মনে করি। আমরা যা বলতে চাই, তা বলে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এবার লিট ফেস্টে বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে থাকছেন ভারতীয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। কাল শনিবার ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে তিনি যোগ দেবেন এ আয়োজনে, কথা বলবেন বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের সঙ্গে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ প্রদান করা হবে ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’ এবং লঞ্চ করা হবে ক্যামব্রিজ শর্ট স্টোরি প্রাইজ।

যে গল্পের পাঠক নেই : ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিনের দুপুরে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার হলে আয়োজিত হয় আলোচনা সভা ‘যে গল্পের পাঠক নেই’। ছোটগল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় সভায়। এতে অংশগ্রহণ করেন সাহিত্যিক মইনুল আহসান সাবের, আহমেদ মুস্তফা কামাল, হামীম কামরুল হক ও রাশিদা সুলতানা।

ক্র্যাশিং রিয়েলিটিস : সারা বিশ্বে চলছে বিরামহীন যুদ্ধ। যুদ্ধ এখন বাস্তবতা। তাই নিয়ে ‘ক্র্যাশিং রিয়েলিটিস’ শিরোনামে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মঞ্চে কথা বলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক মোহাম্মদ হানিফ। সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ সাহিত্য ম্যাগাজিন গ্রান্টারের নির্বাহী সম্পাদক রস পর্টার। মাত্র ২৪ ঘণ্টার জন্য ঢাকায় ছিলেন তিনি। কথা বলেন তার নতুন বই ‘রেড বার্ডস’ নিয়ে। সময়ের গান, অসময়ের কবিতা : দুপুরে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘সময়ের গান, অসময়ের কবিতা’ শিরোনামের সেশন। এ সেশনে নিজেদের স্মৃতিচারণা করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। সেশনটি শেষে সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’ ও কবি তারিক সুজাতের হলি আর্টিজন নিয়ে রচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করেন আসাদুজ্জামান নূর। এ সেশনটি সঞ্চালনা করেন কবি শামীম রেজা।

মান্টোর প্রদর্শনী : বিকালে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় পাকিস্তানের প্রখ্যাত লেখক সাদাত হোসেন মান্টোর জীবনী নিয়ে নন্দিতা দাসের চলচ্চিত্র ‘মান্টো’। চলচ্চিত্র প্রদর্শন শেষে নন্দিতা বলেন এ ছবি তৈরির গল্প।

এ সময় বটতলার মঞ্চে জয়িতা খান রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। একই সময় ভাস্কর নভেরা মঞ্চে শিশুদের লেখার কর্মশালা করান শিশুতোষ লেখিকা মিতালি পার্কিন্স। এর আগে লনের মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি হয়। বিকালের শেষ ভাগে বাংলা একাডেমির লনে কবিতা পাঠ করেন দেশের শীর্ষ কবিরা। কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজীর সঞ্চালনায় এ আবৃত্তিতে অংশ নেন আলফ্রেড খোকন, রাজু আলাউদ্দিন প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর