সোমবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মেট্রোরেল এক্সপ্রেসওয়ে বৃত্তাকার নৌ-রেল

সুফলের অপেক্ষায় ঢাকা

শিমুল মাহমুদ ও মানিক মুনতাসির

মেট্রোরেল এক্সপ্রেসওয়ে বৃত্তাকার নৌ-রেল

ছোট-বড় কয়েকটি ফ্লাইওভার ও ইউলুপের সুফল পেলেও মেট্রোরেল, বৃত্তাকার নৌপথ, রেলপথ, সড়কপথ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, শান্তিনগর-ঝিলমিল ফ্লাইওভারের সুফল পেতে  আরও অপেক্ষা করতে হবে রাজধানীবাসীকে। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) হচ্ছে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত, যেটি কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। মাত্র ৪০ মিনিটে গাজীপুর থেকে পৌঁছা যাবে কেরানীগঞ্জ। গুলশান লেক সংস্কার, উত্তরার লেকগুলো সংস্কারসহ রাজধানীতে চলমান বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পন্ন হলে বদলে যাবে দুর্ভোগের চিরচেনা ঢাকা। উন্নয়ন কাজের সাময়িক দুর্ভোগ পেরিয়ে স্বস্তি ফিরে আসবে কোটি মানুষের নিত্যযাত্রায়। রাজধানী ঢাকা হবে এক নান্দনিক নগরী। নির্মাণাধীন উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল লাইন-৬ এর প্রকল্প এলাকার মানুষকে এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়িতে দুটি স্প্যানও বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার অবকাঠামো উন্নয়নে আরও যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেলের আরও চারটি পৃথক লাইন। এর মধ্যে গাবতলী থেকে ভাটারা-নতুনবাজার পর্যন্ত লাইন-১ এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে মেট্রোরেলের অন্য লাইনগুলোর কাজ সমাপ্ত হলে হয়তো ব্যক্তিগত গাড়ির নির্ভরতা ভুলেই যাবেন ঢাকাবাসী। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। এ প্রকল্পের প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে বনানী প্যাকেজের কাজ ইতিমধ্যে অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণাধীন মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কর্মযজ্ঞের কারণে আগারগাঁও, শ্যামলী, শেওড়াপাড়া ও মিরপুরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অসহনীয়। তবে আগামী দেড় বছরের মধ্যে এর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেলে চলাচল শুরু করা যাবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে রেলকোচ আমদানির প্রক্রিয়াও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে দুদিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল পথে থাকবে ১৬টি স্টেশন। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত, সার্ভিস লাইন সংস্কার ও ফুটপাথ উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে আন্ডারগ্রাউন্ড সার্ভিস টানেল নির্মাণ শুরু হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেটসহ সব সেবা সংস্থার লাইন একটি টানেলের মধ্য দিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। ফলে সার্ভিস লাইনের ত্রুটিবিচ্যুতি সারাতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পরিবর্তে টানেলের ঢাকনা খুলে মেরামত করলেই চলবে। পরিবহন খাতে এরই মধ্যে মেট্রো সার্ভিসে বেসরকারি খাতের উদ্যোগে মতিঝিল-উত্তরা, বনানী-হাতিরঝিলসহ কয়েকটি রুটে আরামদায়ক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালু করা হয়েছে। এর ফলে উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি বাসায় রেখেই এসব গাড়িতে যাতায়াত করছেন। দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলে চালু করা হয়েছে চক্রাকার বাস সার্ভিস। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, রাজধানীতে দৃশ্যত কতগুলো অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়েছে। আর কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান। এগুলোর পুরোপুরি সুফল পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। তবে যেসব পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলোর শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারলে ঢাকাকে আধুনিক ও সুশৃঙ্খল শহরে পরিণত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে কিছু কিছু এলাকায় ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে যানজট আরও বেড়েছে। এর মধ্যে মালিবাগ-কাকরাইল রোডে ফ্লাইওভারের নিচের অংশকে রীতিমতো গাড়ি পার্কিংয়ের স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে এ এলাকা ফ্লাইওভারের পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। এখানে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই যানজট লেগে থাকছে। এয়ারপোর্ট থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত সার্ভিস লাইনের চলমান কাজ জনভোগান্তি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করছে। ফলে পুরো এলাকা এখন ধুলায় একাকার। এ ছাড়া বৃত্তাকার নৌপথ, বৃত্তাকার রেলপথ, বৃত্তাকার সড়ক পথসহ প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে ঢাকা রূপ নেবে একটি অত্যাধুনিক সিটিতে। কিন্তু এ তিনটি প্রকল্প অবশ্য এখনো পরিকল্পনাতেই আটকে রয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী একসময় ঢাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড টিউব স্থাপন করা হবে। যার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে অভাবনীয় পরিবর্তন। রামপুরা-বাড্ডা এলাকায় দুটি ইউলুপ নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আরও কয়েকটি ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের পরিকল্পনা অনুযায়ী হাতিরঝিল সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কে ২২টি ইউটার্ন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর জন্য একটি টিম গঠন করে ডিএনসিসি। প্রকৌশলীরা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি মডেল তৈরি করেছেন। বিমানবন্দর মোড় থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত তিনটি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ চলছে এখন। এদিকে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের মানুষের ঢাকায় যাতায়াতের সুবিধার্থে শান্তিনগর-ঝিলমিল ফ্লাইওভার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ১২ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্য হবে এই ফ্লাইওভারের। যা দেশের সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভার। খুব দ্রুতই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ঢাকায় নিরাপদ চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মতিঝিল, পল্টন, দৈনিক বাংলা, শাহবাগ, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

সর্বশেষ খবর