সোমবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

স্বপ্ন দেখছেন শিবচর ও জাজিরার তাঁতিরা

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

স্বপ্ন দেখছেন শিবচর ও জাজিরার তাঁতিরা

মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরায় ১৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হতে যাওয়া তাঁত পল্লী ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের তাঁতিরা। এ প্রকল্পটির জন্য শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে ৬০ একর ও  শরীয়তপুরের জাজিরায় ৪৮ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাঁত পল্লীতে থাকবে কারখানা, আবাসন শিক্ষা প্রশিক্ষণসহ আধুনিক সব সুবিধা। মিরপুরের বেনারসি পল্লীর তাঁতিরাও এ পল্লীর অন্তর্ভুক্ত হবেন। প্রধানমন্ত্রী ১ নভেম্বর এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সরেজমিন একাধিক সূত্রে জানা যায়, নূর মোহাম্মদ বেপারি সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ, সালাম বেপারির বয়স ৫০ পেরিয়েছে, উভয়ের বসবাস শিবচর উপজেলার ভদ্রাসনে। এক সময় বুনতেন উন্নত মানের লুঙ্গি ও তাঁতের শাড়ি। কিন্তু পদ্মা নদীর জন্য ক্রেতাদের কম যোগাযোগের কারণে পর্যায়ক্রমে নিজ পেশা ছেড়ে কৃষি কাজে নামেন। আর জীবিকা নির্বাহের প্রিয় তাঁতের মেশিনের স্থান হয় ঘরের এক কোণে। নিজের বাপ-দাদার পেশায় কখনো ফেরা হবে কিনা তা নিয়ে ছিল চরম সংশয়। শুধু নূর মোহাম্মদ বা সালামই নন ভদ্রাসন ও উমেদপুরের কয়েক হাজার পরিবার পেশা ছেড়ে বিকল্প পেশায় গিয়ে জীবনধারণ করছে।

 কিন্তু পদ্মা সেতুর দ্রুত বাস্তবায়নের সঙ্গে এ এলাকায় তাঁত পল্লী স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছে এ অঞ্চলের তাঁতিরা। তাঁত বোর্ড সূত্র জানায়, ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী তাঁত পল্লীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও জায়গা নির্ধারণ হয়েছে আরও আগেই। দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে মাটি ভরাটের কাজ। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৫৩ কোটি টাকা। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। অসংখ্য ৬ তলাবিশিষ্ট ভবনে প্রত্যেক তাঁতির জন্য ৬০০ ফুটের কারখানা ও ৮০০ ফুটের মধ্যে আবাসন সুবিধা থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে সুতা-রংসহ কাঁচামালের সুবিধা দেওয়া হবে।

 নির্মাণ হবে আন্তর্জাতিক মানের শোরুম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তাঁতিদের ছেলে-মেয়েদের জন্য থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ভদ্রাসন এলাকার তাঁতি সেলিম বলেন, আগে তাঁত শিল্পের কাজ করতাম। লুঙ্গি, গামছা, শাড়ি তৈরি করতাম রাত জেগে। যখন সরকার সুতা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তখন এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে এসেছি। সরকার যদি সহায়তা করে তাহলে আবার এই পেশায় ফিরে যাব। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, শিবচর ও জাজিরার এই তাঁত পল্লী গড়ে তোলা হবে। এটা একটি বৃহৎ প্রকল্প। এতে এ অঞ্চলে তাঁত শিল্পের প্রসার ঘটবে, তাঁত শিল্পের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন হবে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁত পল্লী গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে। প্রথম পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ২৫৩ কোটি টাকার কাজ শেষ করা হবে। এটা একটি মেগা প্রকল্প। এখানে ঢাকার মিরপুরের বেনারসি পল্লীর তাঁতি ও এই অঞ্চলের তাঁতিদের পুনর্বাসন করা হবে। তাঁতিদের সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে অথবা ন্যায্য মূল্যে সুতা, রংসহ বিভিন্ন কাঁচামাল সরবরাহ করা হবে। রং করা, ফ্যাশন ডিজাইনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

সর্বশেষ খবর