মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার অস্ত্র উদ্ধার অভিযান

সাখাওয়াত কাওসার

এবার অস্ত্র উদ্ধার অভিযান

নির্বাচন সামনে রেখে শিগগিরই শুরু হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান। বৈধ অস্ত্রের হালনাগাদের জন্যও দেওয়া হচ্ছে নির্দেশনা। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, নির্বাচন কমিশন থেকে এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা চাওয়ামাত্রই তারা মাঠে নামবে। এদিকে এরই মধ্যে পুলিশ ও র‌্যাবের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে করণীয় ঠিক করেছেন। তারা বলছেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানের জন্য তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সূত্র বলছেন, বিভিন্ন নির্বাচনে অনেক প্রার্থী নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত রাখতে অস্ত্রধারী পেশাদার সন্ত্রাসী ব্যবহার করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের বিপক্ষে ব্যবহার হয় অস্ত্র-বিস্ফোরক। এ সময় পেশাদার সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের হাতবদল হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও পেশাদার সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। এ ধরনের খবরও রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। বিশেষ ধরনের কোড ও সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে হাতবদল হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপকে চিহ্নিত করেছেন তারা। সম্প্রতি রাজধানীতে কয়েকটি গুলির ঘটনা অস্ত্রের ঝনঝনানির ইঙ্গিত দিয়েছে। ৩ নভেম্বর খিলগাঁওয়ে চাঁদা না দেওয়ায় একটি গ্যাংস্টার গ্রুপের ১০-১২ জন সদস্য একটি দোকানে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। পরে র‌্যাব-৩-এর সদস্যরা ওই গ্রুপের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেন। এ ছাড়া গতকাল ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সুতি খালপাড় এলাকায় আসলাম হোসেন (৩২) নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় টহল পুলিশ দেখে তারা ককটেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করলে আসলাম গুলিবিদ্ধ হন।

২৬ অক্টোবর পোস্তগোলা ব্রিজে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। গোলাগুলিও ঘটে। ওইদিন পুলিশের গুলিতে সোহেল নামে একজনের মৃত্যু হয়।

২২ অক্টোবর রাজধানীর উত্তরায় ডাকাতের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির পর একটি আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগজিন, এক রাউন্ড গুলিসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সম্প্রতি রাজধানীর ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে ৫ কেজি গানপাউডারসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ওই বিস্ফোরক রাজনৈতিক নাশকতার কাজে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল। ঘটনাটির তদন্ত চলছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়েছে। এতে আসন্ন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল  নিয়ে আলোচনা হয়। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করার পাশাপাশি অস্ত্র ও বিভিন্ন নাশকতার মামলার আসামিদের দিকে কড়া নজরদারির বিষয়ও বৈঠকে উঠে আসে। পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম রুহুল আমীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাঝেমধ্যেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গুলি, আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হচ্ছে। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার অনেকাংশে কম। এদিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের আর্মস এনফোর্সমেন্ট টিমের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তারা এক ধরনের বিশেষ কোড ও সাংকেতিক ভাষা ব্যবহারের সন্ধান পেয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় গ্রেফতার সন্ত্রাসীদের জিজ্ঞাসাবাদেও আন্ডারওয়ার্ল্ডের অস্ত্রবাজারের এমন বিশেষ কোড ব্যবহারের তথ্য মিলেছে। এর আগে বড় অস্ত্রকে ‘হাতি’ পিস্তল বা রিভলবারকে ‘ঘোড়া’ আর গুলিকে ‘কলাগাছ’ নামে কোড দিয়ে হাতবদল করার তথ্য রয়েছে। বোমাকে ‘সাউন্ডবক্স’ নামে হাতবদলেরও তথ্য রয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা বিস্ফোরককে ‘মাটি’ বলে অভিহিত করে। বিস্ফোরক বিক্রির দেনদরবারের সময় নিজেদের মধ্যে কথোপকথনে এ বিশেষ কোড ও সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে। পাশাপাশি রিভলবারকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো ‘চাকতি’, পিস্তলকে ‘সাতের মাল’ ও ‘পাঁচের মাল’ বলে অভিহিত করছে। সেভেন পয়েন্ট সিক্স-ফাইভ পিস্তলের যেটিতে সাতটি গুলি লোড করা যায়, সেটিকে ‘সাতের মাল’ ও যেটিতে পাঁচটি গুলি লোড করা যায় সেটিকে ‘পাঁচের মাল’ বলে নিজেদের মধ্যে দেনদরবার করছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের (এসএজি) অতিরিক্ত উপকমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্রের অবৈধ কারবারিদের দিকেও তাদের নজরদারি রয়েছে। শুধু নির্বাচন নয়, কোনো উৎসব বা কর্মসূচিতেই যাতে সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে আর্মস এনফোর্সমেন্ট টিম সতর্ক রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে ক্ষুদ্রাস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি সীমান্তের ফাঁক গলে বিস্ফোরকের চালানও ঢুকছে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। তবে মাদক নিয়ে চলতি বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানের কারণে অস্ত্র ব্যবসায়ীরাও বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকার অস্ত্র ব্যবসায়ীরাও অনেক নড়েচড়ে বসেছে। এ কারণে অন্য সময়ের তুলনায় অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকের দামও বেড়েছে। গীমান্তবর্তী ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক মাস ধরে র‌্যাব সদর দফতরের নির্দেশে আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছি। গত মাসে ৬টি বিদেশি পিস্তল, ৭৩ রাউন্ড গুলি, ৯টি ম্যাগজিনসহ আমরা একজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করেছি। গ্রেফতার ব্যক্তির অস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো ঢাকার সাভারে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। ওই সিন্ডিকেটেরই আরেকজন ব্যবসায়ীকে ৮টি অস্ত্রসহ পরদিন চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলেই আমরা বিশেষ অভিযানে নামব। তবে র‌্যাব এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রবাজদের গ্রেফতারে সবসময়ই অভিযান চালায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ অভিযান জোরালোভাবেই অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ খবর