শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর পথে শিশুরা

মির্জা মেহেদী তমাল

ভয়ঙ্কর পথে শিশুরা

বলা হয়, ‘আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ’। কিন্তু মাদক নামের এ ভয়বাহ ভাইরাসটি বড়দের তো বটেই সেইসঙ্গে আক্রমণ করছে শিশুদেরও। মাদকের কবলে পড়ে শিশুরা হারাচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ। মাদকাসক্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে অনেক শিশুই। মাদকের কবলে পড়ে অনেক মেধাবী শিশু-কিশোরই ঝরে পড়ছে। অধিকাংশ শিশু-কিশোর প্রাথমিক অবস্থায় সিগারেট বা ধূমপান করে মাদকে পা দেয়। এরপর আস্তে আস্তে উচ্চমাত্রার মাদক যেমন ঘুমের বড়ি, ডান্ডি, হেরোইন, ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, পড়ালেখায় মন বসে না। এমনকি খাওয়া-দাওয়ায়ও অরুচি এসে যায়। ডান্ডি, ঘুমের বড়ি, ইয়াবা সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই এ-জাতীয় মাদকে বেশি ঝুঁকছে। ঘুমের বড়ি ইদানীং মাদক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ফার্মেসি থেকে তারা ছলেবলে-কৌশলে ঘুমের ওষুধ সহজে কিনেই মাদকাসক্ত হচ্ছে। মাদকের জন্য তারা অকালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। দেশের ৮৫ শতাংশ পথশিশুই মাদকাসক্ত। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুর ১৯ শতাংশ হেরোইন নামের মারাত্মক মাদক সেবন করে। আর ৮ শতাংশ সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক নিচ্ছে। বিভিন্ন মাদকের মধ্যে পথশিশুরা গাঁজা, হেরোইন, ঘুমের বড়ি, ডান্ডির মতো মাদকে বেশি আসক্ত হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ৮ থেকে ১০ বছরের পথশিশুরা গাঁজা, সিগারেট, ডান্ডির মতো মাদক গ্রহণ করছে। আর ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা ফেনসিডিল, হেরোইনে আসক্ত। এমনকি ক্ষুধার কষ্ট থেকে ভুলে থাকতে এই শিশুরা নিয়মিত মাদক সেবন করছে। অভিভাবকহীন অনেক শিশুর ভাগ্যে অধিকাংশ সময় খাবার জোটে না। আর এ পরিস্থিতিতে ক্ষুধার জ্বালা যাতে না বোঝা যায় সেজন্য তারা মাদক নিচ্ছে এবং মাদক ব্যবসায়ীরা এই শিশুদের মাদক বিক্রির কাজেও ব্যবহার করছে। কমলাপুুর রেলস্টেশনের আশপাশে গেলেই দেখা যায় টোকাই ও পথশিশু দলবেঁধে ডান্ডি নামক সহজলভ্য মাদক গ্রহণ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে শুধু নয়, পথশিশুরাও মাদকের কবলে ঝুঁকছে। যে সময়টা তাদের বিকাশ ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে কাটানোর কথা সে সময়টা তারা মরণব্যাধি মাদকে ঝুঁকে পড়ছে। মাদকের কবল থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষায় শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একা কাজ করলে চলবে না সেইসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে আমার, আপনার। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাও মাদক থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর