শিরোনাম
সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাঁড়াশি অভিযানেও ঢুকছে মাদক

আলী আজম

সাঁড়াশি অভিযানেও ঢুকছে মাদক

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ৪ মে থেকে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। তবুও বন্ধ হয়নি মাদকের প্রবেশ। গত ১০ মাসে মাদকের সঙ্গে জড়িত প্রায় দেড় লাখ গ্রেফতার হলেও আড়ালেই থেকে গেছে গডফাদার ও নেপথ্য নায়করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য সময়ের তুলনায় মাদক প্রবেশের হার কিছুটা কমছে এটা ঠিক। তবুও চাইলেই মিলছে মাদক। তবে দামটা একটু বেশি। তাহলে কীভাবে মাদক প্রবেশ করছে এটাও তো কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। জানা গেছে, গত কয়েক বছরে ইয়াবার আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ায় সমাজে পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। মাদকাসক্ত ছেলের হাতে আত্মীয়স্বজন এমনকি বাবা-মা খুন হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। স্বামী কিংবা পরিবারের একজন সদস্য মাদকাসক্ত হওয়ায় পুরো পরিবারের সুখ ভেস্তে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই এমন চিত্র গণমাধ্যমে উঠে আসছে। বেড়ে যাচ্ছিল জনমনে উদ্বেগ। অনেকটা বাধ্য হয়েই সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মে মাস থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান। নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবু কিছু অসাধু সদস্য এবং দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী কিছু রাজনৈতিক নেতাদের নেপথ্য মদদে এখনো ঢুকছে মাদক। পৌঁছে যাচ্ছে দেশের অলিগলিতে। অন্যদিকে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি এড়াতে মাদক ব্যবসায়ীরা রোগী ও লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে, গাড়ির চাকার ভিতর, বিশেষভাবে তৈরি করা গাড়ির বডিতে করে নিয়ে আসছে ইয়াবা। গত ৯ নভেম্বর খেজুরের ভিতর করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে এক হাজার ৫০ পিস ইয়াবা নিয়ে আসে রুবেল সরদার নামে এক ব্যক্তি। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করে এপিবিএন-এর সদস্যরা। গত ২০ অক্টোবর সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে করে ২০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে আসে গাড়ি চালক আনিসুল হক। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-২-এর দল তল্লাশি করে ইয়াবা জব্দসহ গাড়ি চালককে গ্রেফতার করে। ১৮ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে লবণের ট্রাকে করে আসা ৩৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ একটি ট্রাক জব্দসহ দুজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭। এর আগে ৮ আগস্ট লবণের কাভার্ড ভ্যানের চাকার ভিতরে থাকা দুই লাখ ৬ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‌্যাব-১। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ-র‌্যাবসহ সবগুলো সংস্থার হাতে মাদক সেবন ও বিক্রির অপরাধে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় সারা দেশে মামলা হয়েছে ১ লাখ ২২১টি। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে প্রায় তিনশ। উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। ডিএমপি সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০ হাজার ৩০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১২ হাজার ৫০৫টি। র‌্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৮ হাজার ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ মে থেকে চালানো মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ হাজার ৭৯৪ জনকে। একই সময়ে চালানো র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০ হাজার ৫৭ জনকে গ্রেফতার করে সাজা দিয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৮৪ জন। উদ্ধার করা হয়েছে ৪০৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার মাদকদ্রব্য। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ এই স্লোগানে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। ৪ মে থেকে টানা অভিযানে মাদকের সঙ্গে জড়িতদের ভীত নড়িয়ে দিয়েছি। আগে হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া গেলেও এখন দুষ্কর। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা রুট পরিবর্তন করলেও বিষয়টি নজরে রয়েছে। জলদস্যুদের মতো মাদকও নির্মূল করা হবে। মাদকের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে মাদকের সরবরাহ এখন আগের তুলনায় অনেক কমেছে। তবে মাদকের চাহিদা ও জোগান বন্ধ করতে না পারলে পরিপূর্ণ নির্মূল করা কঠিন। দেশের অভ্যন্তরে জোগান বন্ধ করতে উদ্ধার-অভিযান চলছে। আর চাহিদা বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। ডিএনসি’র সহকারী পরিচালক (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) খোরশিদ আলম জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সফলতাও আসছে। স্পটভিত্তিক মাদক বিক্রি বন্ধে হয়েছে। চলমান সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ এ অভিযান অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই মাদক নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

সর্বশেষ খবর