মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের লড়াইয়ে মেরুকরণ

বাম জোটের প্রার্থীরা লড়বেন ১৭৭ আসনে

রুহুল আমিন রাসেল

কাস্তে, মই ও কোদাল নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কমিউনিস্টরা। সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে এবার সংসদ নির্বাচনে ১৭৭টি আসনে লড়ছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরে বিকল্প গড়ার বৃহত্তর সংগ্রাম হিসেবে নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চাইছেন বামপন্থিরা। এ নির্বাচনে নিজেদের ভোট অতীতের চেয়ে বাড়বে বলে তারা মনে করেন।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, আট দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবারের নির্বাচনে সারা দেশের ১৭৭টি সংসদীয় আসনে লড়ছেন জোটভুক্ত দলগুলোর প্রার্থীরা। এসব সংসদীয়     আসনে জোটভুক্ত দলের প্রাথমিক তালিকায় আছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। তবে যে সব আসনে জোটের একাধিক প্রার্থী নেই, সেখানে একক প্রার্থী হিসেবে ১১৪ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি ৬৩টি সংসদীয় আসনের প্রার্থী তালিকা আগামী ২১ নভেম্বর চূড়ান্ত করা হবে। প্রাথমিক তালিকা মোতাবেক বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান শরিক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ৯০টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ৬০টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২১টি, বাসদ (মাকর্সবাদী) ২২টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ৯টি, গণসংহতি আন্দোলন তিনটি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ তিনটি, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন তিনটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী দিতে চায়। এই জোটের বাইরে থাকা ঐক্য ন্যাপ এবং গণমুক্তি ইউনিয়নও কমিউনিস্ট পার্টির কাস্তে মার্কা নিয়ে এবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আটদলীয় এই বাম জোটের তিন দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। দলগুলো হলো— সিপিবি, বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। যে সব দলের নিবন্ধন নেই তারা একে অন্যের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছে। তবে গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থীরা কেউ কেউ স্বতন্ত্র হিসেবেও ভোট করবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার ১ শতাংশ লুটেরাদের বিরুদ্ধে ও আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে এবং ৯৯ শতাংশ শোষিত মানুষের পক্ষের শক্তি হিসেবে স্বাধীন অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বাম জোট। আমরা এই নির্বাচনকে বিকল্প গড়ার বৃহত্তর সংগ্রাম হিসেবে নিয়েছি। ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি জিতলে জনগণের স্বার্থ রক্ষা হবে না, বরং ভোট পচে যাবে’ উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, তারা বিরোধী দলে থাকলে ভালো কথা বলে, ক্ষমতায় গেলে উল্টো রূপ নেয়। তাদের সব সময়েই বিরোধী দলে থাকা উচিত। তাহলে তারা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলবে। এই দুই গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা থাকলে পরিস্থিতি হবে— ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলায় ঝাঁপ দেওয়ার মতোই। তাই জনগণের স্বার্থে কাস্তে মার্কায় ভোট চান এই কমিউনিস্ট নেতা। বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, অসুস্থ, দুর্নীতিগ্রস্ত, দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নির্বাচন হয়ে গেছে গণতন্ত্রের নির্বাসন। গণতন্ত্রের বদলে ভোটতন্ত্রের নির্বাচন টাকা ও পেশি শক্তির কবলে পতিত। জনগণের ক্ষতায়নের নামে দল, গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে নিবেদিত। মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্ম ভোটের বাজারে দামি পণ্যে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থা পাল্টানোর কঠিন সংগ্রামে বামশক্তি যতটা মোড় ফেরাতে পারবে, ততটাই জনগণের দৃষ্টি ও সমর্থন লাভে সমর্থ হবে। আমরা নির্বাসিত গণতন্ত্রকে পুনর্বাসিত করার অংশ হিসেবে নির্বাচন করছি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আমরা লড়াই করছি। বিগত সময়ে মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানের দাবিতে বামপন্থি-কমিউনিস্টরাই রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, অন্যদের মতো প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সারেনি। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি, কারণ বিগত পাঁচ বছর মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তাই মানুষও তাদের অবমাননাবোধ থেকেই ভোট দিতে চান। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রতিনিধিত্ব করতে আমরা ভোট করছি। আশা করছি মানুষ আমাদের ভোট দেবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর