শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গায়েবি মামলার ফাঁদ

মির্জা মেহেদী তমাল

গায়েবি মামলার ফাঁদ

মো. মুসা মিয়া। কার্গো ব্যবসায়ী। মেসার্স এম এম কেরিং এজেন্সির কর্ণধার। ব্যবসাতেই তার ব্যস্ততা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ভৈরব, আর শাখা অফিস ঢাকায় ছুটতে ছুটতেই তার দিন কেটে যায়। এই ব্যবসায়ী এখন আর ব্যবসার কাজে ছুটছেন না। তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ তাকে খুঁজছে। যার বিরুদ্ধে একটি জিডি নেই কোনো থানায়, সেই ব্যক্তিটি গ্রেফতারের ভয়ে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দূরের কথা নিজ বাড়িতেও ফিরতে পারছেন না। তিনি জানতে পেরেছেন, ‘গায়েবি মামলা’য় গ্রেফতারের জন্য পুলিশ তাকে খুঁজছে। তার দিন এখন কাটছে ‘গায়েবি মামলা’র আতঙ্কে। ঘটনাটি ভৈরবের।

কিন্তু কেন এই ব্যবসায়ীকে গায়েবি মামলায় গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে ব্যবসায়ী যা জানতে পারলেন, তাতে তিনি হতবাক। গায়েবি মামলায় ফাঁসানোর নেপথ্যকারী হিসেবে যার নাম তিনি জানতে পেরেছেন, তিনি এলাকার প্রভাবশালী। স্থানীয় থানা পুুলিশের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ। জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার সঙ্গে। ব্যক্তিগত এই বিরোধের কারণে তাকে শায়েস্তা করতে গায়েবি মামলা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা চলছে। প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির লোকজন চারদিন আগে মাইকিং করে তাকে শায়েস্তা করার হুমকি দেয়। সংশ্লিষ্টরা বলছে, পুরানা কোনো রাজনৈতিক মামলাকে গায়েবি মামলা হিসেবে বলা হয়ে থাকে। আর এসব মামলায় সাধারণত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই গ্রেফতার হন। অথবা রাজনৈতিক কোনো সহিংস ঘটনার তদন্তে কোনো নেতা-কর্মীর নাম উঠে এলে পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই নেতা বা কর্মী এই মামলাটিকে গায়েবি হিসেবেই ধরে নেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ীকে এমন গায়েবি কোনো মামলায় গ্রেফতারের অপচেষ্টাটি অপপ্রয়োগ বলেই মনে করছেন তারা। গায়েবি মামলায় ফাঁদ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কেউ যেন এই মামলা ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারেন। বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ব্যবসায়ী মুসা মিয়ার বাড়ি ভৈরবের মধ্যমপাড়ার কালিপুর এলাকায়। মুসা মিয়ার অভিযোগ, তাকে গায়েবি মামলায় গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ফাঁসানো হচ্ছে তাকে। এর নেপথ্যকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাজী জয়নাল। আরও আছেন আতিক আর সেন্টু। ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল বলেন, গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিএনপির কর্মীরা হামলা চালায়। এ ব্যাপারে পুলিশের এসআই অভিজিত ৪৮জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। ওই মামলায় তাকে খোঁজা হচ্ছে। এজাহারে তার নাম রয়েছে কি না জানতে চাইলে, পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তার নাম নেই। মুসা মিয়া বলেন, তাদের ৫ বিঘা জমি নিয়ে দাদার আমল থেকে একটি মামলা চলছে। বিগত ৬৪ বছর ধরে মামলাটি দাদার পর বাবা এবং তার পরের জেনারেশন তারা পরিচালনা করছে। মামলাটি করেছেন পাশের মিলা মিয়া। এখন তার নাতি রাব্বানি, জিলানি এবং কিবরিয়া দাদার অনুপস্থিতিতে মামলা চালাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর আমরা জানতে পারি, যে মামলাটি হয়েছে, তা জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া। মামলার আর্জিতে নিজেদের জমির রেকর্ড দেখালেও তারা আমাদের অর্ধেক জমির মালিকানা দাবি করে। তাদের অভিযোগ, তাদের অর্ধেক জমি আমরা বেদখল রেখেছি। তাদের এই জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিকবার বিচার শালিস হয়। বিচারটি সর্বশেষ করেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও তেল ব্যবসায়ী হাজী জয়নাল। কিন্তু পরে আমরা জানতে পারি, হাজী জয়নাল নিজেই তাদের সেই জমি ক্রয় করতে যাচ্ছে। তখন আমরা তাদের বলি, মামলার বিষয়টি শেষ করে কেনা বেচা করতে হবে। আমাদের বাধার কারনে জয়নাল হাজি বায়নার টাকা দিয়েও ফেরত নিয়ে যায়। এতেকরে আমাদের সাথে জয়নাল হাজির মনোমাীলন্য হয়। এটি আট মাস আগের ঘটনা। মুসা মিয়া অভিযোগ করে বলেন, গত সোমবার আওয়ামী লীগের এক কর্মী সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সেন্টু আর আতিক আমাকে শায়েসত্মা করার কথা বলে।

এসময় চারদিনের মধ্যে আমার বিচার করা হবে বলে ঘোষণঅ দেও্রয়া হয়। জয়নাল হাজীও  সে সময় এসব বলেন। এরপরই পুলিশ আমাকে খুঁজতে থাকে।

প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে জানতে পারি, আমাকে গায়েবী মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর