শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

নজরুলের সেই গানের পাখি ‘বউ কথা কও’

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

নজরুলের সেই গানের পাখি ‘বউ কথা কও’

‘বউ কথা কও’ পাখিটিকে কাজী নজরুল ইসলাম তার লেখা একটি নজরুলগীতিতে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বউ কথা কও, বউ কথা কও, কও কথা অভিমানী। সেধে সেধে কেঁদে কেঁদে যাবে কত যামিনী।, আমার প্রাণের ভাষা শিখে ডাকে পাখি পিউ কাঁহা, খোঁজে তোমায় মেঘে মেঘে আঁখি মোর সৌদামিনী।’ আর শুধু গানেই নয়, এই পখিকে নিয়ে চালু আছে নানান উপকথাও। যুগ যুগ ধরে আমাদের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে এই পাখি। বউ কথা কও এটি হচ্ছে আমাদের আঞ্চলিক নাম। ইংরেজি নাম Indian Cuckoo. আর বৈজ্ঞানিক নাম Cuculus micropterus. এরা কোকিল পরিবারভুক্ত পাখি। ভারতীয় কোকিল নামেও পরিচিত।  ‘বউ কথা কও’ পাখি প্রজননের সময় গ্রীষ্মে পরিযায়ী হয়ে আমাদের দেশে আসে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, চীনের উত্তরাঞ্চল ও রাশিয়ায় এদের দেখা মেলে। সম্প্রতি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে এই পাখিটিকে ক্যামেরাবন্দী করেছেন শৌখিন ফটোগ্রাফার মাসুদা হক ইফা।  পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, বউ কথা কও নিভৃতচারী ও লাজুক পাখি। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম। এদের শরীরের উপরি অংশ ধূসর এবং পেছনের অংশে কালো পালক রয়েছে। লেজটি বিস্তৃত। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ডানায় বাদামি এবং সাদা বর্ণের পালকের সংমিশ্রণ রয়েছে। গলা ও বুকের ওপরটা বাদামি ছাই। লেজে রয়েছে চওড়া কালচে ডোরা। চোখ লালচে বাদামি। ঠোঁট কালো। পা, আঙুল ও নখ হলুদ।

স্ত্রী পাখির গলা ফিকে ধূসর। এরা ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। ওজন ১২০-১৩০ গ্রাম। উচ্চৈঃস্বরের ডাক শুনে সহজেই এদের চেনা যায়। অঞ্চলভেদে এদের প্রজন্ম ঋতু ভিন্ন থাকে। আমাদের দেশে এপ্রিল-জুন মাসে এদের প্রজনন সময়। এ সময় স্ত্রী পাখি একটিমাত্র ডিম পাড়ে। ফিঙে বা কসাই পাখির বাসায় ডিম পেড়ে উধাও হয়ে যায়। আর ডিম পাড়ার আগেই ফিঙে বা কাকের বাসা থেকে একটি ডিম নিচে ফেলে দেয়। ১২ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ১৮ থেকে ২০ দিনে বাচ্চারা উড়তে শেখে। এই পাখির আয়ুষ্কাল প্রায় ৭ বছর। এরা কখনো একাকী কখনো বা জোড়ায় বিচরণ করে। শুঁয়াপোকা, ঘাসফড়িং, পঙ্গপাল, উড়ন্ত উঁইপোকা, ফল, গিরগিটি  খেয়ে জীবন ধারণ করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, অন্য সাধারণ পাখি থেকে তারা একটু ভিন্ন। এরা নিজেদের বাসায় ডিম দেয় না। ফিঙে বা কসাই পাখির বাসায় ডিম দেয়। শুধু তাই নয়, সংখ্যা ঠিক রাখতে গিয়ে ডিম দেওয়ার সময় অন্য পাখির বাসা থেকে একটি ডিম নিচে ফেলে দেয়। ডাকের জন্যই এরা প্রসিদ্ধ।

সর্বশেষ খবর