বুধবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রিকশাচালক শত কোটি টাকার মালিক!

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের টেকনাফের রিকশাচালক নুরুল হক ভুট্টো। ২০০৯-১০ সালে তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দিন এনে দিন খাওয়ার জীবন তার ভালো লাগছিল না। জড়িয়ে পড়লেন ইয়াবা ব্যবসায়। প্রথমে ছোটখাটো চালান। আস্তে আস্তে চালানের আকৃতি বাড়ে। এ ব্যবসায় সঙ্গী করে নেন তার স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের। তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে রিকশাচালক ভুট্টো বনে যান কোটিপতি। টেকনাফের সেই আলোচিত প্রাসাদগুলোর দুটির মালিক তিনি। গড়েছেন অঢেল সম্পদ। সিআইডি সূত্র জানান, ২০০৯ সালে শূন্য হাতে ঢাকায় এসেছিলেন গোলাম ফারুক দম্পতি। কিন্তু হঠাৎই পাল্টে যায় তাদের জীবনধারা। মাত্র নয় বছরের ব্যবধানে এ দম্পতি একটি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মালিক। ঢাকার অদূরে গাজীপুরে রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খুঁজে পায় এ দুই দম্পতির আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার নেপথ্য কাহিনী। তাদের এই অল্প সময়ে বদলে যাওয়া জীবনের গল্প শুনে সিআইডি কর্মকর্তারা হতবাক। ঊর্ধ্বতন এক সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘জীবনে অনেক ঘটনার তদন্ত করেছি। কিন্তু এভাবে শূন্য থেকে শত কোটি টাকার মালিক কেউ হতে পারে আগে শুনিনি।’ তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী এ দম্পতিসহ ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী ৩৪ জনের শত কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে; যা শিগগিরই আদালতের মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত করা হবে। গতকাল দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একটি মাদক মামলা হয়। ওই মামলার সূত্র ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টো, তার বড় ভাই, বাবা, ভাগ্নে, বিকাশ এজেন্টসহ ১৭ জনের নামে একই বছরের আগস্টে টেকনাফ থানায় মানি লন্ডারিং মামলা হয়। ভুট্টোর মামলায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ সোমবার ও গতকাল ঢাকার বাড্ডা থেকে মাদকের গডফাদার এবং অস্ত্র ব্যবসার ডিলার গোলাম ফারুক ও তার স্ত্রী আফরোজা আক্তার ওরফে অ্যানিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত আরও অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না ফারুক-অ্যানি দম্পতির। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০০৯ সালে শূন্য হাতে ঢাকায় আসেন। এরপর গাজীপুরে একটি অস্ত্র ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গে জড়ান ফারুক। পাশাপাশি গার্মেন্ট ব্যবসা শুরু করেন। মূলত গার্মেন্ট ব্যবসার আড়ালে চলে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা। পরে আরও বেশি টাকা কামানোর নেশায় জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়। ফারুক নুরুল হক ভুট্টোর কাছ থেকে ইয়াবা এনে বিক্রি করেন। প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে এলেজা এক্সপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি মেশিনারি ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন ফারুক। বিভিন্ন ব্যাংকে নিজের ও স্ত্রীর নামে-বেনামে কোটি টাকার বেশি গচ্ছিত আছে। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার টাকায় বাড়ি, জমি, গাড়িসহ শত কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।

সর্বশেষ খবর