শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

লাল শাপলার স্বর্গরাজ্যে অতিথি পাখির মেলা

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত, জাবি

লাল শাপলার স্বর্গরাজ্যে অতিথি পাখির মেলা

পরিবহন চত্বরের পাশের বিশাল লেকটিতে দিনভর ফুটে থাকে অজস্র  লাল শাপলা। সকালের প্রথম সূর্য রক্তিম আভায় পূব আকাশে জেগে ওঠে, আর অপার্থিব সেই আলোয় লাল শাপলার গায়ে জড়িয়ে থাকা শিশির কণাগুলো ‘মুক্তো দানা’য় পরিণত হয়। এ অপার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়ে লেকের চারদিক মুখরিত করে অতিথি পাখির দল। প্রতি বছরের মতো এবারও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) লেকে আসতে শুরু করেছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির দল। সেলফোনের অ্যালার্মের বদলে পাখির কিচিরমিচির মধুর সংগীতে এখন নিয়মিত ঘুম ভাঙছে জাবি শিক্ষার্থীদের। সকালের সূর্য মধ্য দুপুর পেরিয়ে গোধূলির আকাশ রাঙিয়ে তুললেও ফুরোয় না লাল শাপলার ফাঁকে ফাঁকে পাখিদের জলকেলি আর খুনসুটি। হুট করেই আবার লেকের পানি ছেড়ে শূন্যে উড়াল দেয় পাখির একেকটা ঝাঁক।

 সবুজে মোড়ানো ক্যাম্পাস আর হেমন্তের নীল আকাশের বুকে ইতিউতি ভেসে বেড়ানো মেঘের সঙ্গে মিতালি গড়ে দেওয়ার জন্যই যেন ক্যাম্পাসের আকাশজুড়ে দল বেঁধে উড়তে দেখা যায় তাদের।

 রিকশায় ঘুরতে বেরিয়ে কিংবা আনমনা হয়ে ক্লাসে যাওয়ার সময় আচমকা পাশের বন্ধুটির কনুইয়ের গুঁতোর ইঙ্গিত আর উল্লসিত কণ্ঠের ‘বন্ধু দেখ দেখ’ শব্দে আকাশের দিকে তাকিয়ে অতিথি পাখির ওড়াউড়ির দৃশ্যটা তাই জাবিতে এখন নিয়মিত। ছুটির দিনগুলোতে জাবির এই অতিথিদের দেখার জন্য শহরের কোলাহল পেরিয়ে ছুটে আসেন অনেক নগরবাসী। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও তারা হয়ে ওঠেন জাবির অতিথি। নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্যের সংস্থান থাকায় অভয়ারণ্য হিসেবে পাখিরা জাবি ক্যাম্পাসকে বেছে নেয় বলে জানান পাখি গবেষক হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল আহসান। তিনি জানান, অক্টোবরের শেষের দিকে প্রায় ১ হাজার পাখি এসেছে ক্যাম্পাসে। তার মধ্যে ৯৭% ছোট সরালি। এ পাখি হাওর অঞ্চল বিশেষ করে সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা  ও মেঘালয়  থেকে এসেছে। মার্চ মাসের দিকে গরমের আভাস পেলেই এরা চলে যাবে। বাকি ৩% পাখি দেশের বাইরে থেকে বিশেষ করে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে আসে। এর মধ্যে আছে অধিকাংশই বড় সরালি জাতীয় পাখি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক অতিথি পাখি  আসে এ ক্যাম্পাসে। জাবিতে আসা বেশিরভাগ পাখিই হাঁসজাতীয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যে পাখিগুলো দেখা যাচ্ছে তার অধিকাংশ ল্যাঞ্জা হাঁস, খুনতে হাঁস। হাঁসজাতীয় ১০ প্রজাতির পাখি ক্যাম্পাসে দেখা গেছে।’ প্রতিবারের মতো এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী ১১ জানুয়ারি বর্ণিল পাখি মেলার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।

 

সর্বশেষ খবর