শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের হাওয়া সারাদেশে

সমন্বয়হীনতায় জাতীয় পার্টি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে চলছে অস্থিরতা। সারা বছর গুছিয়ে ওঠা দলটিতে হঠাৎ করেই দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা। পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি। কবে ফিরবেন এ নিয়ে একেকজন একেকরম কথা বলছেন। পার্টির সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ নীরব। তার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না নেতা-কর্মীরা। কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও মুখ খুলছেন না। এদিকে জোটগতভাবে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টিকে আগামীতে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার জন্য পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে জাতীয় পার্টিকে জোটগতভাবে ৪৫টি আসন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এসব  আসনে আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থীও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি ৪৫টি আসনের বাইরে আরও দেড় শ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। দলের ও জোটগত মনোনয়ন না পাওয়ায় অনেক জাপা প্রার্থী পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের কথা গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বৃহস্পতিবার বনানীর কার্যালয়ে ভাঙচুরেরও খবর ছড়িয়েছে। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও পদত্যাগ করেছেন। এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পার্টির বিরুদ্ধে কথা বলা নেতারা বলছেন, ‘আমরা পার্টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য না করা সত্ত্বেও গণমাধ্যমে তা এসেছে।’ কেন্দ্রীয় নেতা সফিকুল ইসলাম সেন্টু, কাজী মামুন, জহিরুল আলম রুবেল, আবুল কাশেম রিপনসহ অনেকেই বলেছেন, তারা পার্টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। এ প্রসঙ্গে পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কাজী মামুন বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বিনষ্ট করার জন্যই আমার নামে পার্টির মহাসচিবকে ঘিরে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে। আমার বরাতে যেসব মিডিয়ায় নেতিবাচক মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে ওইসব গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠিয়েছি।’ জানতে চাইলে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘এইচ এম এরশাদ ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। শিগগিরই তিনি বাসায় ফিরবেন।’ তিনি বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল হীন উদ্দেশ্যে জাপার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একটি বড় দল, সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। আবার মহাজোটের কথা বিবেচনায় রেখেও ছাড় দিতে হচ্ছে। তাই অনেকেই মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভে অসত্য ও বানোয়াট অভিযোগ তুলছেন। তবে মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা আছে, নির্বাচনের সামর্থ্য আছে এবং জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় মহাজোটের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে মহাজোটের প্রকাশিত তালিকা বিভ্রান্তিমূলক। আমরা আশা করছি মহাজোটে জাতীয় পার্টি সম্মানজনক আসন পাবে।’ জানা যায়, আসন বণ্টন, মনোনয়নের চিঠি বিতরণ নিয়ে ভেতরে-বাইরে ব্যাপক হতাশা বিরাজ করছে।

এ অবস্থায় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতার কারণে ভেঙে পড়েছে দলটির চেইন অব কমান্ড। কেউ কাউকে মানতে চাইছেন না। মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে নেতা-কর্মীরা কথা বললে কেউ কোনো দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। এ প্রেক্ষাপটে মনোনয়ন না পেয়ে কিছু নেতা পদত্যাগ করেছেন। জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তারা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কয়েকদিন মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ-হতাশা দেখা গেছে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়েও। দলীয় মনোনয়ন ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাচ্ছে। জোটগতভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা না হওয়ায় প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ক্ষুব্ধ।

সর্বশেষ খবর