শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কালো কাগজ হচ্ছে ইউরো

মির্জা মেহেদী তমাল

কালো কাগজ হচ্ছে ইউরো

ব্যক্তিগত কাজের জন্য হোটেল লা মেরেডিয়ানে যান ব্যবসায়ী রুহুল আমিন। সেখানে আবুল ও এলেক্স নামে দুই ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে আবুল, এলেক্স, মাইক ও পিটার সুযোগ বুঝে রুহুলকে মুরগির ফার্ম, গরুর খামার এবং তেলাপিয়া মাছের ফিশারিতে অনেক লাভ হবে—এমন বোঝাতে থাকে। আর এসব মুরগি, গরু ও তেলাপিয়া মাছ ক্যামেরুন নিয়ে যাওয়া হবে এবং ব্যবসায় অনেক টাকা আয় হবে বলে রুহুলকে প্রলোভন দেখায়। এ ছাড়াও তারা মেশিনের মাধ্যমে কালো কাগজের সঙ্গে আসল ইউরো মেশিনের ভিতর রাখলে আসল ইউরো তৈরি হবে বলে মেশিন আছে বলে জানায়। এই ব্যবসায়ে অনেক টাকা আয় করা যাবে। আবুল ও এলেক্স বিভিন্ন সময় নিত্যনতুন দামি গাড়ি নিয়ে রুহুলের বাড়ি যায় এবং ব্যবসার ব্যাপারে আলোচনা করে। পরে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে রুহুলের কাছ থেকে তিন দফায় ৯৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে ২৮ অক্টোবর বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেন রুহুল। ঘটনাটি ৫ মাস আগের।  পুলিশ আবুল ও এলেক্সকে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, একটি ইলেক্ট্রনিক্স লকার, একটি কাঠের বাক্স ও ১২ বান্ডিল কালো কাগজ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। ওই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জেরার মুখে তারা জানায়, কালো কাগজের সঙ্গে আসল ইউরো মিশিয়ে মেশিনের ভিতর দিয়ে তারা ইউরো তৈরির কথা বলে সাধারণ মানুষকে। মুরগির ফার্ম, গরুর খামার এবং তেলাপিয়া মাছ চাষে অনেক লাভ। অনেক টাকার হাতছানি। ক্যামেরুনে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের উৎপাদিত এসব পণ্য। অল্প পুঁজিতে এই ব্যবসায় অনেক টাকা আয় করা যাবে। এমন প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব ফাঁদ পেতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।

আরও ঘটনা : ফুটবল খেলা ও বিভিন্ন ব্যবসার নামে ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসেন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও একেকজন বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। আর নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছেন তারা। কয়েকজন আফ্রিকানকে আটকের পর এই তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বসবাসরত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ১৪ জন নাগরিককে আটক করে র‌্যাব-১। বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ২৯টি মোবাইল   ফোন সেট, ২টি ল্যাপটপ, নগদ ১ লাখ ৫৮৫ টাকা, ১ হাজার ১৩ ডলার ও বিভিন্ন ব্যাংকের কয়েকটি চেক উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব জানায়, আফ্রিকান এই নাগরিকরা মূলত ফুটবল খেলা ও বিভিন্ ব্যবসার নামে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশেআসেন। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা এখানে অবস্থান করছিলেন। আটককৃতদের মধ্যে নাইজেরিয়ার সাতজন, উগান্ডার দুজন, ক্যামেরুনের একজন, কঙ্গোর একজন, লাইবেরিয়ার একজন, তানজানিয়ার একজন এবং মোজাম্বিকের একজন নাগরিক রয়েছেন।’ র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খোলে এরা। তারা নিজেদের আফগানিস্তানে যুদ্ধরত সৈনিক বা জাতিসংঘের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে এদেশের অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। একপর্যায়ে বন্ধুর জন্য দামি উপহার পাঠাবে বলে জানায়। কয়েকদিন পর এ চক্রেরই বাংলাদেশি সদস্যরা ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে ফোন দিয়ে কাস্টমস বা ডাক বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কথা বলে। ট্যাক্স ফি বা অবৈধ জিনিসের কথা বলে উপহার ছাড়ানোর জন্য বলে। এক পর্যায়ে তাদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ।’ র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, উদ্ধারকৃত বিভিন্ন ব্যাংকের  চেকের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলেই তাদের প্রতারণার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বেরিয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, সাদা কাগজে রাসায়নিক মিশিয়ে ডলার তৈরির প্রলোভন দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।’ এ চক্রটি প্রতিমাসে ৩০-৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে কয়েকজন বাংলাদেশি সহায়তা করেন। সেসব বাংলাদেশিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশিদের সঙ্গে যে কোনো ধরনের লেনদেন ব্যবসা করার আগে ভালোভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর