শিরোনাম
রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের হাওয়া সারাদেশে

দণ্ডিতদের সব পথ এখনো বন্ধই

সাবিরা সুলতানার দণ্ড স্থগিতের আদেশ স্থগিত, আজ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

যশোর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানার দণ্ড স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতির আদালত। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ স্থগিতাদেশ দেন। পাশাপাশি আবেদন দুটি আজ শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে তিনি পাঠিয়ে দেন। ফলে এখন পর্যন্ত দণ্ডিতদের ভোটে দাঁড়ানোর সব পথ বন্ধই রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে আদেশে চেম্বার বিচারপতি বলেন, যেহেতু এর আগে আমরা এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছি, এটা আমরা আগামীকাল (রবিবার) পর্যন্ত স্থগিত করে ফুল কোর্টে পাঠিয়ে দিচ্ছি। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, রবিবার সকালে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও এ বি এম বায়েজিদ। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, আমিনুল ইসলাম, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন।

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আজকের (শনিবার) আদেশের ফলে সাবিরা সুলতানার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ আর থাকল না, যদি না আগামীকাল (রবিবার) আপিল বিভাগ ভিন্নতর কোনো আদেশ দেয়। আপিল বিভাগ আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল থাকবে।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু সাবিরা সুলতানাই নয়, এটা সংবিধানের বিধান। দুই বছরের বেশি দণ্ডিত কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’ সরকার তাড়াহুড়া করে ছুটির দিনে আদালত বসিয়ে এ ধরনের স্থগিতাদেশ দিতে বাধ্য করেছে বলে সাবিরা সুলতানার আইনজীবীদের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘তাদের মুখে এ ধরনের কথা শোভা পায় না। কারণ, পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যখন রায় দিয়েছিলেন তখন তারা রাত ২টার সময় বিচারপতির বাসায় গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এ অর্ডারটার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার কারণ হলো, আমি যদি না যাই কনফিক্লিটিং, দুই রকমের রায় হয়ে যাচ্ছে। হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ অর্ডার দিয়েছে যে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং সে আদেশটা আপিল বিভাগ বহাল রেখেছে।

মাহবুবে আলম বলেন, একক বেঞ্চে বসে যদি একজন বিচারপতি ভিন্নতর রায় দেন, তাহলে তো দুই রকম রায় হয়ে যায়। তাই অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে মনে করি আমার দায়িত্ব তা সর্বোচ্চ আদালতের গোচরে নেওয়া এবং নিষ্পত্তি করা। সেটা তো রবিবারও হতে পারত, শনিবার বন্ধের দিনে কেন? জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, রবিবার মনোনয়নপত্র বাছাই করার তারিখ। রবিবার যদি মনোনয়ন বাছাই হয়ে যায় তাহলে তো এ অর্ডারের আর কিছু থাকল না। সে জন্য আজকে (শনিবার) গিয়ে এটার স্থগিতাদেশ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল বলে গিয়েছি। আমি যে যাব তাদের আইনজীবীদের ব্যক্তিগতভাবে গতকালই (শুক্রবার) জানিয়েছি। তারা সবাই ছিলেন।’ জয়নুল আবেদীন বলেন, শনিবার কোথাও কোনো আদালত বসে না। মনে হচ্ছে দেশে একটা ইমারজেন্সি অবস্থা বিরাজ করছে। বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল বন্ধের দিনে আদালত বসিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই, সেটাই আজকে প্রমাণ হলো। সরকার যেভাবে বলে সেভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। জয়নুল বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার কোনো আইন দ্বারা খর্ব করা যায় না। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে নৈতিক স্খলনের কারণে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। তবে বিচারিক আদালতের দণ্ড আপিল বিভাগে চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে দণ্ডিত বলার কোনো বিধান নেই। তিনি আরও বলেন, বিচারিক আদালতের সাজা বা দণ্ড স্থগিত করার এখতিয়ার হাই কোর্ট বিভাগের রয়েছে। যে কারণে তারা সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে। অথচ অ্যাটর্নি জেনারেল আমাদের কিছু অবহিত না করেই হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আজ শুনানি করেছেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় চলতি বছর ১২ জুলাই সাবিরা সুলতানাকে দুটি ধারায় তিন বছর করে মোট ৬ বছরের সাজা দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। সাবিরা সুলতানা যশোর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি ওই সাজা ও দণ্ড স্থগিতের আবেদন করলে বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক বেঞ্চ বৃহস্পতিবার তা মঞ্জুর করে। ফলে তার নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা নেই বলে সে সময় তার আইনজীবী জানান। অথচ দুই দিন আগে হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বলেছিল, দুই বছরের বেশি দণ্ড ও সাজা হলে আপিল করেও কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েও সাড়া পাননি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন। ফলে বন্ধ হয়ে যায় দণ্ডিতদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর পথ।

সর্বশেষ খবর