বুধবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের হাওয়া

৩০ বিদ্রোহী প্রার্থীকে সতর্ক করল আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দলের চিঠি ছাড়া যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এমন ৩০ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীকে গতকাল সতর্ক  করে  দেওয়া হয়। ৯ ডিসেম্বরের আগেই তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এর কোনো রকম হেরফের হলে তাদের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। গতকাল দিনভর নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা টেলিফোনে বা ধানমন্ডিতে ডেকে নিয়ে এমন নিদের্শনা দেন ৩০ বিদ্রোহী প্রার্থীকে। কেন্দ্রের সতর্ক বার্তা পাওয়া এই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা আজ ও কাল কিংবা পরশু তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন। সূত্র জানায়, গতকাল বিকালে দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে বসে বিভিন্ন জেলার ৩০ বিদ্রোহীর সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। যেসব আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে, সেসব আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যহার করে দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে কাজ করতে বলা হয়। অন্যথায় দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যেখানে মহাজোটের প্রার্থী রয়েছে, সেসব আসনে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা চিঠি ছাড়া প্রার্থী হয়েছেন তাদের জোটের স্বার্থে দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মতিউর সুনামগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। মতিউর রহমান নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছেন। একইভাবে মেহেরপুর-১ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়নাল আবেদীন তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে সম্মত হয়েছেন। ময়মনসিংহ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় এক সাংগঠনিক সম্পাদক টেলিফোন করে জানতে চেয়েছেন আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব কিনা? আমি জানিয়েছি, যে সিদ্ধান্ত দেবেন-সেটাই মেনে নেব। উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ-৪ আসন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। কেন্দ্রের ফোন পাওয়া সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাকে ফোন করে বলা হয়েছে, নেত্রী ডেকেছেন। নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় এসেছি, তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন-আমি সেটাই মেনে নিব।’ এ ছাড়াও গতকাল বরগুনা সদর আসনে জাহাঙ্গীর কবিরসহ আরও ২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী, পিরোজপুরে এ কে এম আউয়াল, মেহেরপুরে জয়নাল আবেদীনসহ প্রায় ৩০ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। পরে তারা গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তারা দলীয় সভানেত্রীকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে অবহিত করেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গতকাল আমরা কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সারা দেশে প্রায় ৩০ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা অনেকেই আজকালের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে জানিয়েছেন। আজ বুধবারও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আশা করি শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবেন না তারা। যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেন, তবে তাদের জন্য দলের দরজা চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর