শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তবুও শৃঙ্খলা ফেরেনি সড়কে

একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা, মালিক-চালক-শ্রমিকরা আরও বেপরোয়া

সাঈদুর রহমান রিমন

তবুও শৃঙ্খলা ফেরেনি সড়কে

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের পরও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। তড়িঘড়ি করে নানা উদ্যোগ নিয়ে সড়কে কিছুটা শৃঙ্খলা আনা গেলেও তা টেকসই হয়নি। ফলে দুর্ঘটনাও কমেনি, ঝুঁকিও রয়ে গেছে পদে পদে। গেল নভেম্বর মাসেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে দেড় শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২৮১ জন নিহত এবং ৭শরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে, থামছে না মৃত্যুর মিছিল। 

ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। আইন-কানুন মানছে না বলেই সড়ক-মহাসড়কে নানা নৈরাজ্য চলছে। অদক্ষ চালকের অবহেলা, অত্যধিক যাত্রী বহনের মাত্রাতিরিক্ত বাণিজ্যিক প্রবণতা, সর্বোপরি বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের মতে, সড়কের সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত গাড়ি, বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিংয়ের কারণেই সড়কে মৃত্যুর ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।

সরকারের ১১ পদক্ষেপ : নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় সরকার ১১টি পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছিল। সেসব পদক্ষেপের অধিকাংশই অনিশ্চয়তায় আটকা পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সরকারি পদক্ষেপগুলো হচ্ছে, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজকে ৫টি বাস দেওয়া, নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে ও দুর্ঘটনা রোধে রমিজ উদ্দিন স্কুল-সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে আন্ডার পাস নির্মাণ, দেশের প্রতিটি স্কুল-সংলগ্ন রাস্তায় স্পিড ব্রেকার বসানো এবং শুধু স্কুলের জন্য প্ল্যাকার্ড সংবলিত বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেওয়ার কথাও ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত জাবালে নূরের ২টি বাসের রুট পারমিট বাতিল করা, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অবৈধ গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। একই সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে রমিজ উদ্দিন কলেজে পাঁচটি বাস প্রদান করার পাশাপাশি বিআরটিএ ও ডিএমপির উদ্যোগে এক মাসেই অন্তত ১৮টি চেকপোস্ট বসানো হয়। সেসব স্থানে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কাগজপত্রবিহীন গাড়ির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু ঘোষিত অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়নি। উপরন্তু ট্রাফিকের শিথিলতার কারণে ড্রাইভাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট : শিক্ষার্থী আন্দোলনের অল্প সময়ের মধ্যেই সড়ক-মহাসড়কের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নেয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তারা সড়ক পরিবহন আইনের বিরুদ্ধে ধর্মঘট ডেকে পুরো দেশকে জিম্মি করে ফেলে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর সড়কজুড়ে সীমাহীন ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকরা সর্বত্রই বিশৃঙ্খলার একচ্ছত্র রাজ্য গড়ে তুলেছে বলেও অভিযোগ করেছেন যাত্রী, পথচারী, ভুক্তভোগীরা। সড়ক- মহাসড়কে বিপজ্জনক ওভারটেকিং ও যাত্রীবোঝাই বাস-মিনিবাস চলন্ত অবস্থাতেই ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হচ্ছে। চলতে চলতেই পথিমধ্যে আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে দ্রুতগামী যানবাহন। পরিবহন চালক-শ্রমিকরা যাত্রীদের সঙ্গে অহরহ দুর্ব্যবহার করছে, বাদানুবাদ, হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়ছে। অভিযানের মুখে কাগজপত্রবিহীন শত শত গাড়ি রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন স্থানে এবং গ্যারেজ-ওয়ার্কশপের সামনে যেসব গাড়ি সারিবদ্ধভাবে ফেলে রাখা ছিল প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে সেসব লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি আবার রাজধানীর রাজপথে চলাচল করছে। এসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা, বেড়ে চলেছে হতাহতের সংখ্যাও। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চাই সম্মিলিত প্রয়াস : ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের নেতা ও জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, আন্দোলন ফলপ্রসূ করতে দেশ ও প্রবাসের সবাইকে আন্তরিক অর্থে সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস। কারণ এটি এমন একটি অবস্থা, যার শিকার যে কেউ হতে পারেন। খবর : এনআরবি নিউজের। গত ৩ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউস্থ স্টার কাবাব রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা শুধু বাংলাদেশ বা যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা নয়, এই সমস্যা বিশ্বের ছোট-বড়, উন্নত-অনুন্নত সব দেশের। তাই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী জোরদার করতে হবে। এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ। একা কারও পক্ষে ‘নিরাপদ সড়ক’ তৈরি করা সম্ভব নয়। সরকার, জনগণ, আইন-কানুনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই ‘নিরাপদ সড়ক’ তৈরিতে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রসঙ্গত, ‘নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ চলতি বছর ‘একুশে পদক’ প্রাপ্তির জন্য তার সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র নিসচা এই সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে। এতে অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর (নির্বাচিত) জন ল্যু। নিসচা যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গনি, মূলধারার রাজনীতিক ও আসাল-এর ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ উদ্দিন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, কমিউনিটি নেতা মজিবুর রহমান, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির অন্যতম উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন ও মিসবাহ আহমেদ, নিসচা যুক্তরাষ্ট্র শাখার সদস্য-সচিব স্বীকৃতি বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান বাবু, রিপন, শামীম প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর