শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফেসবুকে নকল প্রেম

মির্জা মেহেদী তমাল

ফেসবুকে নকল প্রেম

আলাউদ্দিন আর লিমা। ফেসবুকে তাদের পরিচয়। এরপর রাতজেগে কথা বলা। ভালোলাগা থেকে প্রেম। দুজন দুজনকে প্রচণ্ড বিশ্বাস করতে থাকে। কথা না বললে তাদের ভালো লাগে না। রাত জেগে থাকার কারণে তাদের প্রতিদিনকার রুটিনও পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাদের ঘনিষ্ঠতা এমন একপর্যায়ে চলে যায় দুজন দুজনকে ছবি দেয়। ছেলেটি যেভাবে বলে, মেয়েটি সেভাবেই তাকে ছবি পাঠায়। ছেলেটিও তাই। এভাবেই চলছিল তাদের। এক সময় আরও কাছে আসতে চায় তারা। ছবি দেখে কথা বলে আর ভালো লাগছিল না। ভালোবাসা প্রেম যেহেতু হয়েছে, সামনা সামনি দেখা করতে তাদের নিজেদের কোনো আপত্তি ছিল না।

তারা দুজন পার্কে দেখা করেন প্রথমে। পরে ছেলেটির বন্ধুর বাসায়, কখনো আবাসিক হোটেলে। প্রেমে দুজনই মশগুল। লেখাপড়ায় তাদের মন আর নেই। লিমা ছেলেটিকে বলে, তাকে ছাড়া বাঁচবে না। ছেলেটিও তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, দুনিয়ার কেউ তাদের আলাদা করতে পারবে না। তারা যখন শারীরিক সম্পর্ক করত, ছবি তুলত আলাউদ্দিন। কিছু মনে করত না লিমা। ভাবত, ভালোবাসার মানুষ, ছবি তুললেই বা কী? কিন্তু এই ছবি যে তার কাল হয়ে দাঁড়াবে সেটি আগে  বোঝেনি লিমা। পরের ইতিহাস অত্যন্ত করুণ।

ঘটনাটি ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর এলাকার একটি গ্রামের। মেয়েটি কালিয়াকৈর খান উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার প্রেমিক আলাউদ্দিন কলেজ ছাত্র।

লিমা একসময় বিয়ের কথা বলে আলাউদ্দিনকে। কিন্তু আলাউদ্দিন বিষয়টি  এড়িয়ে যায়। বেশ কয়েকদিন লিমা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে আলাউদ্দিন কেমন যেন রাগ হতে থাকে। লিমার সন্দেহ হতে থাকে। আলাউদ্দিন কী তাকে বিয়ে করবে না? এমন প্রশ্ন তার মনে সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে লিমা তাকে বলে, সে আর শারীরিক সম্পর্ক করবে না বিয়ে না করলে। এ কথা বলতেই ক্ষুব্ধ আলাউদ্দিন। বলে, এসব ফালতু কথা বলবা না। আবারও বিয়ের কথা বললে, অন্যরকম হবে বিষয়টা। এমন কথা শুনে ভয় পায় লিমা। লিমা তার সঙ্গে যোগযোগ কমিয়ে দিতে থাকে। কিন্তু আলাউদ্দিন যেন যোগাযোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফোনে তাকে হুমকি দেয়, তাদের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে। মহাবিপদে পড়ে লিমা। ভালোবাসার মানুষটা এমন নির্দয় কীভাবে হতে পারে। লিমার বান্ধবীরা বলে, তুই একজন খারাপ লোকের সঙ্গে সম্পর্ক করেছিস। ও তোরে ফাঁদে ফেলেছে। এমন কথা শুনে লিমা কোনো উপায় খুঁজে পায় না। তার পরিবারের কাছে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। তার পরিবার আলাউদ্দিনের বাবা মায়ের কাছে অভিযোগ করেন। এতে আলাউদ্দিন যেন পাগল হয়ে যায়। নানাভাবে লিমাকে হুমকি দিতে শুরু করে। আলাউদ্দিন তার ফেসবুক আইডি অলেখা কাব্য থেকে তাদের দুজনের বেশ কয়েকটি আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে দেয়। লিমা বিষয়টি জানতে পেরে কী করবে বুঝতে পারে না। নিজের ঘরে বসে থাকে। একদিন পর সেই ঘর থেকে লিমার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাজ-লজ্জা ও আত্মসম্মানের ভয়ে এই দুনিয়ায় আর থাকেনি লিমা। ঘটনা শুনে পালায় আলাউদ্দিন। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ফেসবুকে নকল প্রেমিক-প্রেমিকার ছড়াছড়ি। তারা ফাঁদ পাততেই আইডি খুলে বসে আছে। প্রেমের অভিনয় করে ছেলে বা মেয়েকে ফাঁদে ফেলে। টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। আবার কখনো অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। এসব নিয়ে খুনোখুনি থেকে শুরু করে আত্মহননের মতো ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন,  ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় একজন ব্যক্তি বা মহিলা সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া থাকে। এমনকি একে-?অপরকে নিজেদের সম্পর্কে মিথ্যা কথাও বলেন অনেকে। পরে সেসব কথা প্রকাশ্যে আসলে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। অনেকেই আছেন যারা কেবল যৌনসুখের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করেন। তার জন্য এমন অনেক তথ্যই তারা দেন যেগুলোর কোনো ?সত্যতা নেই। প্রথম সাক্ষাতেই এরা নিজেদের চাহিদা মেটানোর কথা ভাবতে থাকে। তবে এক্ষেত্রে মেয়েদের থেকে এগিয়ে ছেলেরা। এসব জেনে বুঝেই কোনো সম্পর্কে জড়ানো উচিত। সবচেয়ে ভালো এসব সম্পর্ক থেকে এড়িয়ে চলা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর