শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

সরাইলের গ্রামে বিশ্বসেরা গ্রেহাউন্ড কুকুরের খামার

মোস্তফা কাজল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে ফিরে

সরাইলের গ্রামে বিশ্বসেরা গ্রেহাউন্ড কুকুরের খামার

বিশ্বসেরা বাংলাদেশের গ্রেহাউন্ড কুকুরের দেখা মিলবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে। গ্রামটি উপজেলা সদরের কালীকচ্ছ বাজার থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে। গ্রামের লোকেরা একে চেনে কুকুরবাড়ি হিসেবে। বাড়িতে ঢোকার পর ঘেউ ঘেউ আওয়াজ। একটু এগিয়ে দেখা গেল কুকুরগুলো। বাড়ির চারপাশের গাছের নিচে বাঁধা কুকুরছানা। মণি রানী দাস নামে এক নারী এগিয়ে এসে জানালেন, ছানাগুলো বিক্রি হবে। দাম কত জানতে চাইলে বলেন, একেকটি ছানা ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। এ পরিবারের প্রধান পেশা কুকুর বিক্রি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কেবল এই একটি বাড়িতেই এ জাতের কুকুরের প্রজনন ঘটে। তাদের বাপ-দাদারও পেশা ছিল কুকুর বিক্রি। তবে কুকুর বিক্রি করে রোজগার আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে বললেন বাড়ির লোকজন। তপন দাসের বাড়িতে আছে প্রায় ১৫/১৬টি কুকুর। বড় কুকুর ছয়টি। সেগুলো বাচ্চা দেয়। শাবকগুলোকে বিক্রি করা হয়। দুধ-ভাত, মাছ-মাংস কুকুরছানার প্রিয় খাবার। সুস্বাস্থ্যের জন্য মাঝেমধ্যে মাংসও খাওয়ানো হয়। কেবল মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়ানো হয় না। তপন দাস বললেন, ‘একটি কুকুর পালতে যে পরিমাণ খাবার খাওয়ানো দরকার, তা জোগাতে কষ্ট হয়। নিজেদেরই তিনবেলা ভালো করে খাওয়া জোটে না, কুকুরকে কী খাওয়াব? কেবল পৈতৃক পেশা বলে ধরে রেখেছি। আগের মতো গ্রেহাউন্ডও জন্মে না। পাঁচটি বাচ্চা জন্মালে দুটো মরে যায়। রোগবালাইও বেশি হয়। ফলে  গ্রেহাউন্ডের সঙ্গে অন্য কুকুরের মিলনের মাধ্যমে নতুন জাতের কুকুরের প্রজননে মনোযোগী হয়েছি। সেগুলোকে বলা হয়— ক্রস।’ সরাইলের কুকুরের নাম বহুকাল ধরেই ইতিহাসের পাতায় জড়িয়ে আছে। নানা কিংবদন্তি, ঘটনার জন্মদাতা এ কুকুর। কথিত আছে, বহুকাল আগে জমিদারের এক  দেওয়ান হাতি নিয়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি কুকুর দেখে খুব ভালো লেগে যায়। তিনি কুকুরটিকে নিতে আগ্রহী হলেন। তবে বাদ সাধলেন কুকুরের মালিক। প্রিয় প্রাণীটি কোনোমতেই হাতছাড়া করবেন না। দেওয়ানও হিংস্র কুকুরটি নেবেনই। অনেক কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা, বাদ-বিবাদের পর হাতির বিনিময়ে কুকুর নিয়ে ফিরলেন জমিদারের দেওয়ান।  সেটিই শ্বাপদসংকুল জঙ্গলে হবে তার একমাত্র রক্ষাকর্তা, শিকারের সঙ্গী। সরাইলের জমিদার দেওয়ানের হাত ধরে এভাবেই  গ্রেহাউন্ড চলে আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। একেক কুকুরের একেক নাম— টাইগার, মধু, পপি, কালী, লালি, টমি, কালা। নাম ধরে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয় কুকুরগুলো। নাম রাখা হয় জন্মের কিছুদিন পর দেহের বর্ণ বা স্বভাব অনুযায়ী। গ্রামাঞ্চলে শিয়াল, বনবিড়াল, বাগডাশা শিকারে এরা পারদর্শী। শহুরে মানুষের কাছে পালিত হয় শখে। এ কুকুর দেখতে অনেকটা শিয়ালের মতো। হালকা-পাতলা গড়ন। আকারে লম্বাটে। স্বভাবে বাঘের মতো এবং চোখেমুখে শিকারের নেশা। পাঁচ বছর আগে এদের যোগ হয়েছে র‌্যাবের ডগ স্কোয়াডে। এ ছাড়া এ জাতের কুকুরের কান ও লেজ লম্বা হয়। এদের গায়ে ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। এই কুকুরের নজর তীক্ষ। এই জাতের পুরুষ কুকুরের উচ্চতা হয় ২৫-২৮ ইঞ্চি এবং ওজন ২৩-৩৩ কেজি। আর নারী কুকুরের উচ্চতা হয় ২৩-২৬ ইঞ্চি এবং ওজন হয় ১৮-২৮ কেজি। প্রতি ঘণ্টায় এই কুকুর প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। এই কুকুর গড়ে ৮-১৪ বছর বাঁচে। এসব কুকুরের রং দুই ধরনের হয়, বাদামি-সাদা ও সাদা-কালো। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর