মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনে সতর্ক দৃষ্টি বিদেশিদের

নির্বাচনের দিন নিজেরাই ভোট কেন্দ্র দেখতে যাবেন যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানিসহ বেশির ভাগ পশ্চিমা রাষ্ট্রদূত

জুলকার নাইন

নির্বাচনে সতর্ক দৃষ্টি বিদেশিদের

আসন্ন নির্বাচনের ঘটনাপ্রবাহের ওপর নিবিড় সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুরাষ্ট্র ও জোটগুলো। সব মতের রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সহিংসতামুক্ত নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হয় কিনা তা-ই তাদের আগ্রহের বিষয়। বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর প্রত্যাশা— রাজনৈতিক বিরোধ কাটিয়ে উৎসবমুখর নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ তাদের মতের প্রতিফলন ঘটিয়ে পছন্দমতো সরকার গঠনের সুযোগ পাবে। যদিও বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর একটি বড় অংশের মধ্যে এখনো নির্বাচন শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণমূলক হয় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। অন্য অংশের আশঙ্কা, নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে সহিংস হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি। তবে এখন পর্যন্ত বিরোধী পক্ষের নেতা-কর্মীদের নানান কারণে পুলিশি গ্রেফতার ছাড়া সামগ্রিক পরিবেশকে স্বস্তিদায়ক ও উৎসাহব্যঞ্জক মনে করছেন প্রায় সব উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও সংস্থা।

জানতে চাইলে জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফাহরেনজোল্জ বলেন, ‘নির্বাচনের ওপর আমরা গভীরভাবে নজর রাখব। আমি নিজেই পরিদর্শনে যাব।’ ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত রিনসে তিরিঙ্ক বলেন, ‘পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠালেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের ওপর গভীর নজর রাখবে ইইউ। ইতিমধ্যেই দুই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তারা সম্ভবত চমৎকার ভূমিকা রাখবেন।’ চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জ বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনটি নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। জানা যায়, ঢাকায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বেশকিছু বৈঠক করেছেন ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকরা। তারা নির্বাচন কমিশনসহ সুশীলসমাজের বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকেও নির্বাচনী প্রস্তুতি ও পরিবেশ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে গত ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় কানাডীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে এক পলিসি বেকফ্রাস্ট আয়োজনে পশ্চিমা কূটনীতিকরা বাংলাদেশের নির্বাচনে পরিবেশ ও নির্বাচনসংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত জানতে চান। সেখানে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত ও ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এর বাইরে এ বৈঠকে আলোচনায় আসে— বাংলাদেশ একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। বিগত কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমত, নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার এবং নানা ধরনের মামলার মাধ্যমে ঘরছাড়া করা। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে, ভোটের দিন বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়া এবং সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে, ভোট কেন্দ্র আংশিক কিংবা পুরোপুরি দখল করা। এ বৈঠকের পরদিন ৬ ডিসেম্বর মার্কিন কংগ্রেসে গৃহীত এক প্রস্তাবে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তা প্রদানের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অঙ্গীকারবদ্ধ তা পুনর্ব্যক্ত করা হচ্ছে। বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানায় কংগ্রেসসভা। সেইসঙ্গে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রতি মনোযোগী হতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস। এদিকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস তাদের পর্যবেক্ষক পাঠানো ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের অর্থায়নের কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে বিভিন্ন মাধ্যমে।

সর্বশেষ খবর