মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটের হাওয়া সারাদেশে
খালেদা জিয়ার বিষয়ে আদেশ আজ

দুলু টুকু প্রার্থিতা ফিরে পেলেন

হিরো আলমের মনোনয়নপত্রও গ্রহণের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা রিটের ওপর আদেশের জন্য আজ দিন ঠিক করেছে হাই কোর্ট। গতকাল পৃথক তিনটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ আদেশের দিন নির্ধারণ করে।

আদালতে খালেদা জিয়ার রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত দেয়। শুনানিতে প্রার্থিতা বহালের পক্ষে মত দেন মাহবুব তালুকদার। এর বিপক্ষে মত দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তিন কমিশনার। পরে প্রার্থিতা বাতিল করা রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্ত ও নির্বাচন কমিশনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে গত ৯ ডিসেম্বর হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিনটি রিট দায়ের করা হয়।

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়া বগুড়া-৬ ও ৭ এবং ফেনী-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা তার মনোনয়নপত্রগুলো বাতিল করে দেন।

দুলু ও টুকু : বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে নিজ দলের বিকল্প প্রার্থী থাকলে তারা যদি তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে চান তাদের সেই সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, ফিদা এম কামাল, আমিনুল হক হেলাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ আল আশাফুর আলী রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান। পরে আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর দুর্নীতির মামলায় সাজার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে জিতেছি। পরে দুদক আপিল করার পর আপিল বিভাগ পুনঃশুনানির জন্য হাই কোর্ট বিভাগে পাঠায়। যখন হাই কোর্টে ২০০৯ সালে এসেছিলাম তখন ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুসারে কনভিকশন ও সেন্টেন্স সাসপেন্ড করেছিল হাই কোর্ট। এ অর্ডারটা এখনো বহাল আছে। আজকে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আর্গুমেন্ট করলেও আপিলের কোনো নির্দেশনা দেখাতে পারেনি। আমরা ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নজির দেখিয়েছি। পরে আদালত শুনানি নিয়ে মনোনয়ন গ্রহণে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এখন তার নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই। রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর আইনজীবী সৈয়দ আল আশাফুর আলী রাজা বলেন, আজকের আদেশের ফলে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই। ওনার (দুলুর) দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক আইনে দণ্ড হয়েছিল। যেটা হাই কোর্টে সাসপেন্ড হয়ে আছে। এর আগে ২ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই করে নাটোর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও সিরাজগঞ্জ- ২ আসনের বিএনপির প্রার্থী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মনোনয়ন বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে তারা প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। কিন্তু আপিলেও টেকেনি মনোনয়ন। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাই কোর্টে রিট করেন বিএনপির এই দুই প্রার্থী।

হিরো আলম : নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেওয়া আদেশ স্থগিত করে বগুড়ার হিরো আলমের মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জালালের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে হিরো আলমের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কাওছার আলী। এর আগে গত ২ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই করে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার। ১০ জনের স্বাক্ষরে গরমিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এরপর মনোনয়ন ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করেন হিরো আলম। আপিল শুনানি শেষে গত ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনও তার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণার পক্ষে আদেশ দেয়। এরপর ৯ ডিসেম্বর তিনি হাই কোর্টে রিট দায়ের করেন। প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হিরো আলম বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলেও পরবর্তী সময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।

সর্বশেষ খবর