শিরোনাম
বুধবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের ফাঁদ

মির্জা মেহেদী তমাল

ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের ফাঁদ

সামিয়া হোসেন (১৬)। চট্টগ্রামের বাসিন্দা। কদিন আগে তার ফেসবুক আইডি হ্যাক্ড হয়। তিনি কোনোভাবেই তার অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন না। হ্যাক্ড হওয়ার পর তার আইডি পুনরায় ফিরে পেতে অন্য একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাকে বলা হয়, ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। একটি বিকাশ নম্বরও দেওয়া হয়। টাকা দিলে আইডি খুলে দেওয়া হবে মর্মে জানানো হয়। কয়েক দিন পর পুনরায় ওই আইডি থেকে সামিয়ার ইনবক্সে আবার প্রস্তাব আসে। এবার দাবি ২০ হাজার টাকা।

পয়লা ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা না দিলে সামিয়ার আইডিতে থাকা বিভিন্ন ছবি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে (অর্থাৎ অশ্লীল ছবি দিয়ে) ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে ভয়ভীতি দেখানো হয়। সামিয়া এতে ভয় পান। তিনি কোতোয়ালি থানা পুলিশকে জানান। পুলিশ ২৮ নভেম্বর বিকালে মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের একটি দল নিয়ে ফেসবুক হ্যাকার (প্রতারক) খালেদ মাহমুদকে নিউমার্কেটের সামনে থেকে গ্রেফতার করে। খালেদ বিভিন্ন মানুষের ফেসবুক হ্যাক্ড করে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দেন বলে স্বীকার করেন। শহর-গ্রাম সবখানেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ফেসবুক সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। আর বিপুল মানুষের পছন্দের মাধ্যমটিকে ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্র জানান, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ও বেশকিছু ডোমেইন ব্যবহার করে এসব প্রতারক অপকর্ম করে আসছে। তারা এসব ডোমেইনে ফ্রি ওয়েব ফিশিং সাইট খুলে লাইক বাড়ানো এবং চটকদার ভিডিও দেখানোর কথা বলে প্রতারণা করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ইনবক্সে মেসেজ পাঠায়। তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে আইডি ও পাসওয়ার্ড খোয়াচ্ছেন অনেকেই। পরে আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রতারক চক্র অ্যাকাউন্টগুলো তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণত তাদেরই ফেসবুক আইডি হ্যাক্ড করার চেষ্টা করেন যাদেরকে আইডির তথ্যে সহজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ যেটির প্রাইভেসি পাবলিক করা। এরা সাধারণত এ প্রাইভেসি পাবলিক করে রাখা ফেসবুক আইডির মালিকদের খুঁজে বের করে তাদের র‌্যানডমলি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। যারা তাদের এ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেন তারাই মূলত এ চক্রের শিকারে পরিণত হন।’

গোয়েন্দা তথ্যমতে, পরে ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিকাশ নম্বরে টাকা দেওয়ার বিনিময়ে অ্যাকাউন্ট ফেরত দেবেন বলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের আসল মালিকদের ব্ল্যাকমেইল করেন। কিংবা আসল ফেসবুক মালিকের অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন বন্ধুকে তিনি বিপদে পড়েছেন বলে সহানুভূতি চেয়ে টাকা বিকাশ করে দিতে বলেন। মূলত মানসিক চাপ প্রয়োগ করে ফেসবুকের প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিকাশ বা অন্য আরও টাকা লেনদেনের মাধ্যম ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াই এদের মূল লক্ষ্য। ফেসবুক প্রতারণায় জড়িতদের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুকে প্রতারণায় বেশকিছু চক্র জড়িত। এদের ব্যাপারে আমরা অনেক অভিযোগও পেয়েছি। সেইসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম একটি সক্রিয় চক্রের বেশকিছু সদস্যকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতারও করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেককে এ প্রতারণার বিষয়ে আরও সচেতন ও সাবধান হতে হবে। কেননা যে কোনো দুর্ঘটনা বা বিপদ এড়াতে সবার আগে প্রয়োজন ব্যক্তিসচেতনতা। সেইসঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারেও সচেতন হোন। অপরিচিত কারও কাছ থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলে আগে যাচাই করে পরে তাকে আপনার বন্ধু তালিকায় যোগ করুন। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ফেসবুকে মেসেজ পেলে তা পড়ার আগে সতর্ক থাকবেন। এ ধরনের যে কোনো প্রতারক চক্রের সন্ধান পেলে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করুন।’

সর্বশেষ খবর