বৃহস্পতিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এক ক্লিকেই সর্বনাশ

মির্জা মেহেদী তমাল

এক ক্লিকেই সর্বনাশ

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই কিংবা ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। ফেসবুক ব্যবহারকারী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন একটি সমস্যা হচ্ছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং। বিভিন্ন সময় আমরা নানা কারণে ফেসবুক হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে থাকি। সম্প্রতি ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাঁদা দাবি করছে একটি চক্র। আর চাঁদা না দেওয়ায় কয়েকজনের ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট করে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়াও শত বিপত্তির মুখে পড়তে পারে যদি বেহাত হয় সাধের আইডিটি। সামাজিকভাবে হেয় করা থেকে শুরু করে চোখের পলকে আপনি সাধারণ মানুষ থেকে হয়ে যেতে পারেন শীর্ষ কোনো অপরাধীও! ফেসবুকের নিরাপত্তা যতই বাড়ানো হচ্ছে, হ্যাকাররা ততই প্রতারণার নতুন ধরনের সব পদ্ধতি বের করে নিচ্ছে। সম্প্রতি ফেসবুক হ্যাক করতে আপনার ই-মেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেওয়ার নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে বার্তা আসছে। তাতে থাকছে ব্যবহারকারীর প্রোফাইল ছবিসমেত একটি লিংক এবং লেখা থাকছে, is this you? (‘ইজ দিস ইউ?’) আর সর্বনাশের জন্য এই লিংকে একটি ক্লিকই যথেষ্ট। মূলত, আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা কোনো বন্ধুর ছদ্মবেশ ধরেই এই বার্তা পাঠাচ্ছে হ্যাকাররা। বার্তায় যে লিংকটি দেওয়া হচ্ছে তাতে ক্লিক করলে একটি নতুন ট্যাব খুলে যাবে। এই ট্যাবে চাওয়া হবে আপনার ই-মেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড। পাসওয়ার্ড সংগ্রহের এই কৌশলকে ‘ফিশিং’ বলা হয়। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাকারদের পাঠানো কোনো লিংকে ক্লিক করলে নতুন একটি ট্যাবে আবারও লগইন করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এখানে পাসওয়ার্ড দিলে তা চলে যাবে হ্যাকারদের হাতে। জানা যায়, সম্প্রতি সময়ে ক্লোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বানিয়ে হ্যাকাররা বোকা বানাচ্ছে ব্যবহারকারীদের। এ ধরনের ঘটনায় তথ্য হাতিয়ে নেওয়া ছাড়াও নানা উপায়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। নতুন ধরনের এই স্প্যামটি কোনো একটি বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে আসছে বলে এবং আগ্রহ বা কৌতূহল জাগায় ক্লিক করে সহজেই প্রতারিত হয় ব্যবহারকারীরা। বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন। তারা জানান, এ ধরনের লিংক পেলে দ্রুত বার্তাটি ডিলিট করে দিতে হবে এবং তাত্ক্ষণিক পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলতে হবে। যদি অন্য কোনো অ্যাকাউন্ট বা ওয়েবসাইটে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে তাও পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া আপনার যে বন্ধুটির অ্যাকাউন্ট ক্লোন করে বার্তাটি পাঠানো হয়েছে তাকে সে সম্পর্কে অবগত করতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আইটি বিশেষজ্ঞ ইফতেখার আহমেদ বলেন, পরিচিত বা অপরিচিত যে নামেই মেইল বা মেসেজ আসুক না কেন অবশ্যই সেন্ডরস নেম যাচাই করতে হবে। এতে মেইলটি আসলে কে পাঠিয়েছেন তা জানা যাবে। এজন্য বেশি কিছু করার দরকার নেই, কেবল মেইলবক্সে সেন্ডারের নামের ওপর মাউস নিয়ে যান, ক্লিক বা কিছু করা লাগবে না। এমনিতেই দেখা যাবে মেইল আইডি। ব্যাস! এবার মিলিয়ে নিন সেন্ডারস নেম ও ই-মেইল আইডি একই কিনা। যদি এক হয় তাহলে তো বিশ্বাস করলেন, আর এক না হলে সেই মেইল খুলে দেখারই বা কী প্রয়োজন! তিনি বলেন, হুট করে অনলাইনে মেসেজ বা ই-মেইল মানেই যে কোম্পানি থেকে পাঠানো, এমনটা নাও হতে পারে। এমন কোনো বার্তা পেলে অবশ্যই তার ভাষারীতি ও বানান যাচাই করে দেখুন। সত্যি সত্যি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো হলে তা শতভাগ শুদ্ধ থাকার কথা, কিন্তু অন্যদিকে হ্যাকার বা কোনো প্রতারক চক্র পাঠালে সেসব বার্তাতে ভুল বানান আর এলোমেলো ব্যাকরণের ছড়াছড়ি থাকবে। তিনি বলেন, বার্তা বা ই-মেইলে থাকা লিংকে ক্লিক করাকে না বলুন। বেশিরভাগ সাইবার অ্যাটাক এই একটিমাত্র অসচেতনতা থেকে শুরু হয়! একান্ত আবশ্যক হলে লিংকটি দেখে দেখে নিজে ব্রাউজারে টাইপ করুন এবং ভালো করে লক্ষ্য করুন লিংকে দেওয়া অ্যাড্রেসটি। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে আসল সাইটের নামের সঙ্গে মিল রেখে অ্যাড্রেস দেওয়া হলেও সেটি কখনই আসল নাম নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর