শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গতকাল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিনম্র ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গতকাল স্মরণ করেছে বাংলাদেশ। একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করতে ভোর থেকে নগ্নপায়ে হাজার হাজার মানুষ হাজির হয় রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এ-দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় হত্যা করেছিল শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ জাতির হাজারো মেধাবী সন্তানকে। সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি জাতির পক্ষে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় পুষ্পস্তবক প্রদান শেষে ফেরার সময় মিরপুরে ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর সময় প্রসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল সশস্ত্র সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ এলাকা। জাতীয় পতাকা আর শ্রদ্ধার ফুল হাতে নানা বয়সের হাজারো মানুষ জড়ো হয় শহীদবেদিতে। একই সময়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদবেদিও গতকাল ভোর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। স্মৃতিসৌধ মুখরিত হয়ে ওঠে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর পদচারণে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করা। শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

সেই অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে বাংলাদেশ। কলঙ্ক মোচনের পথে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ এখন গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিরও দাবিদার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামোডালে এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসরদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোট। গত বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, অগ্নিসংযোগকারী ও তাদের দোসরদের ভোটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নকশাকারদের দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হলেও নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন তাদের নেতারা। দলটির ২৫ নেতা এবার নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে গতকাল বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়োজন করা হয় আলোচনা অনুষ্ঠানের। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচি পালন করেছে।

সর্বশেষ খবর