শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক মুক্তির হাতছানি জ্যাম জেলির কারখানায়

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি

অর্থনৈতিক মুক্তির হাতছানি জ্যাম জেলির কারখানায়

ঝালকাঠির ব্র্যান্ডি পণ্য পেয়ারা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পেয়ারা চাষিরা। পচনশীল এ ফসলটি পাকার দু-এক দিনের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে পচে যায়।

পেয়ারাবাগানসমৃদ্ধ এ অঞ্চলে হিমাগার অথবা জ্যাম জেলির কারখানা স্থাপন হলে এ ফসলটি থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এতে এ অঞ্চলের বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন এলাকার পেয়ারা চাষিরা।

অবশ্য জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভিমরুলী গ্রামে একটি হিমাগার স্থাপনে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। বাংলাদেশে প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ফলমূলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেয়ারা। পেয়ারা হচ্ছে একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। পেয়ারার ইংরেজি নাম েঁধাধ. বৈজ্ঞানিক নাম Pisidium guajava.। পেয়ারা একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন ফল এবং এতে প্রচুর ভিটামিন-সি আছে। ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি পেয়ারা দিয়ে জেলি, জ্যাম ও জুস তৈরি করা হয়। বরিশালের বানারীপাড়া, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর কুরিয়ানা এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ও নবগ্রাম ইউনিয়নজুড়ে রয়েছে দেশ তথা উপমহাদের বৃহত্তম পেয়ারার বাগান। ‘স্বরূপকাঠি জাত’ হিসেবে স্থানীয়ভাবে ‘গৈয়া’ নামে পরিচিত এ ফলটি ইংরেজিতে গুয়াভা নামে পরিচিত। এ ফলটিকে বাংলার আপেল নামেও অভিহিত করা হয়। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এ অঞ্চলে পেয়ারা আবাদ হয়ে আসছে।

পেয়ারাবাগানের বেশির ভাগ এলাকা ঝালকাঠি সদর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। এ ফলটি ঝালকাঠির ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করেছে। সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ৫০০ হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। পেয়ারাবাগান এলাকায় ১৫-২০টি ভাসমান বাজার আছে। এসব হাটের মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভিমরুলী হাটটি বৃহত্তম। ঝালকাঠির ডুমুরিয়া ও ভিমরুলী পেয়ারাবাগানের চাষি ভবেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি, সুজন বেপারী, সুনীল মজুমদার, বাবুল বেপারীসহ অনেকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, পানির ওপর ভাসমান পেয়ারা হাটকে কেন্দ্র করে পর্যটকের মিলনমেলা বসে ভিমরুলী হাটে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক এখানে ভিড় করেন। তবে পর্যটনের কোনো সুযোগ-সুবিধা গড়ে না ওঠায় ভ্রমণপিপাসুদের মুখে হতাশার কথা। তবে পদ্ধতিগত সমস্যা থাকায় এ ফল হিমাগারে রাখার ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা। বাগান থেকে ছোট ছোট নৌকায় পেয়ারা তুলে ভাসমান বাজারে আনেন কৃষক। এখান থেকে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও নৌপথে পেয়ার প্যাকেটজাত করে পাইকাররা নিয়ে যান। এ অঞ্চলে হিমাগার অথবা জ্যাম জেলির কারখানা না থাকায় বাগানেই প্রচুর পেয়ারা নষ্ট হয়ে যায় বলে কয়েকজন পেয়ারা চাষি জানিয়েছেন। ভিমরুলী গ্রামে একটি হিমাগার ও জ্যাম জেলি কারখানা স্থাপন হলে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। রোগ প্রতিরোধে পেয়ারায় গুণ অপরিসীম। ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে। পেয়ারায় কমলার চেয়ে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন রয়েছে। পেয়ারায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল থাকায় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। পেয়ারার বীজে ওমেগা-৩ ও ৬ পলিয়ান-সেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও আঁশ বিদ্যমান। পেয়ারাপাতার রস ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং সংক্রমণ, প্রদাহ, ব্যথা, জ্বর, বহুমূত্র, আমাশয় প্রভৃতি রোগে ব্যবহার হয়। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস জুড়ে পেয়ারা মৌসুমে ভিমরুলীর খালের ভাসমান হাটে কোটি কোটি টাকার পেয়ারা কেনাবেচা হয়। এখান থেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পেয়ারার চালান যাচ্ছে। এই পানির হাটের দৃশ্য উপভোগ করতে হাজারো পর্যটক প্রতিদিন ভিড় করছেন। এত বছরেও সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগারসহ কোনো সুযোগ-সুবিধাই তৈরি হয়নি। পর্যটনে কোনো প্রশাসনিক নীতিমালাও গড়ে ওঠেনি। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, ‘পর্যটকদের সুব্যবস্থা দিতে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আর্থিক বরাদ্দ এসেছে। পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগারসহ বাথরুম-টয়লেট নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে।’ অন্যদিকে জেলার ব্র্যান্ডিং হিসেবে পেয়ারা চাষি ও দেশি জাতের এ পেয়ারার মানোন্নয়নে নানা উদ্যোগ নেওয়ারও কথা জানালেন তিনি। বলেন, ‘জ্যাম জেলি কারখানার জন্য বেসরকারি পর্যায়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর