শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন বানচালে নাশকতার পরিকল্পনা, আটক ১৫১

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নির্বাচন বানচালের ভয়ঙ্কর নাশকতা পরিকল্পনার বৈঠকের সময় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৫১ জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বৈঠকে পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে বিএনপির প্রায় পাঁচ-ছয় জন নেতা পালিয়ে যান। আটকদের থেকে এ সময় ২৭টি ককটেলসহ বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পৃথক তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালায়।

আটকের তথ্য দিয়ে পুলিশ জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে নারায়ণগঞ্জের দুটি আসনে নাশকতার ছক আঁকতে শুরু করেন জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। তারা টার্গেট করেছিলেন পোশাকশ্রমিকদের। বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত জামায়াত নেতা-কর্মীদের দিয়ে দাবি-দাওয়ার ইস্যু তৈরি করে শ্রমিকদের ফুঁসিয়ে তুলে আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে দেবেন। এতে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। জিনিয়াস ভিত্তি পরীক্ষার নামে এ বৈঠক শুরু হয় গতকাল সকালে ফতুল্লার পাগলা হাইস্কুল, মাসদাইর ইসলামিয়া আদর্শ ফাজিল মাদ্রাসা, বক্তাবলী কানাইনগর ছোবহানিয়া স্কুলসহ সদর-বন্দরের পৃথক স্থানে। বৈঠকের এমন তথ্য ফাঁস হয়ে গোয়েন্দাদের কাছে পৌঁছায়। এর মধ্যে ফতুল্লার পাগলা হাইস্কুল থেকে থানা জামায়াতের রোকন ইয়াসিন মাস্টারসহ ৪৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এখান থেকে জামায়াত ও বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা কৌশলে পালিয়ে যান বলে পুলিশের দাবি। একই সময় মাসদাইর ইসলামিয়া আদর্শ ফাজিল মাদ্রাসা থেকে পাঁচ নারীসহ ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় উভয় স্থান থেকে ১৮টি ককটেল ও বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই উদ্ধার করে পুলিশ। একই সময় সদর মডেল থানা পুলিশ ১৩, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ৮ ও বন্দর থানা পুলিশ ২৭ জনকে আটক করে তাদের কাছ থেকে ককটেল ও জিহাদি বই উদ্ধার করে।

জেলা পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, নারায়ণগঞ্জে ভয়ঙ্কর টার্গেট নিয়েছে জামায়াত-শিবির। বিশেষ করে তাদের মূল টার্গেট সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আসনটি। সাংগঠনিকভাবে শামীম ওসমান শক্তিশালী হওয়ায় যে কোনো মূল্যে তারা এ আসনে আঘাত করতে চাইছে। ইতিমধ্যে তাদের কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য পৌঁছেছে। নাশকতাকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ তথা সরকারি দলের প্রায় ২০ জন নেতাকে টার্গেট করেছেন। নির্বাচনের দিন নানা ভয়ঙ্কর কিছু ঘটিয়ে তারা নির্বাচন বানচালের একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন।

পরিকল্পনায় শক্তি জোগাচ্ছেন জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা। ইতিমধ্যে তাদের নাম পাওয়া গেছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণসংযোগে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলে আসছিলেন, নারায়ণগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের ফাইটাররা প্রবেশ করেছে। এ নিয়ে তিনি প্রশাসন তথা নারায়ণগঞ্জবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের জানান, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের গোপন বৈঠকে অভিযান চালিয়ে মোট ১০৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ১৮টি ককটেল ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনে নাশকতার ছক আঁকতে শুরু করেন জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। নাশকতার ছকে তারা টার্গেট করেছিলেন পোশাকশ্রমিকদের। বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত জামায়াত ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের দিয়ে দাবি-দাওয়ার ইস্যু তৈরি করে শ্রমিকদের ফুঁসিয়ে তুলবেন। এতে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে এবং নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি জানান, জিনিয়াস ভিত্তি পরীক্ষাটি হলো জিনিয়াস ভিত্তি প্রকল্পের একটি অংশ। এটি শুধু নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষাটি ছাত্রশিবির আয়োজন করে। এ পরীক্ষার আড়ালে জামায়াত-শিবির মিটিং করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। পৃথক তিনটি মিটিংয়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যান তারা। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ‘আমাদের কাছে আটকদের অভিভাবকরা দাবি করেছেন তাদের মধ্যে অনেক সাধারণ লোকও আছে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরিদর্শক (তদন্ত) শাহজালাল, এসআই শাফিউল আলম ও এসআই আরিফুর রহমানকে দিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি যাচাই-বাছাই করে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের শনাক্ত করবে। তাদের তদন্তে যারা সাধারণ লোক তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। যাচাই-বাছাই শেষে আটকদের নাম প্রকাশ করা হবে।’

 

সর্বশেষ খবর