শিরোনাম
সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঠিকানা ল চেম্বার

মির্জা মেহেদী তমাল

ঠিকানা ল চেম্বার

অনলাইনে ল্যাপটপ মোবাইল সেট কেনা বেচার বিজ্ঞাপন দেখে নিজের ল্যাপটপ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেন তুহিন। ক’দিন আগেই তিনি ল্যাপটপটি বিদেশ থেকে এনেছেন। হঠাৎ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তিনি ল্যাপটপ বিক্রির চিন্তা করেন। তুহিন ঠিকানাটি কাগজে লিখে নেন। একটি ‘ল’ চেম্বারের কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞাপনে। ল্যাপটপ নিয়ে এলিফ্যান্ট রোডের সেই ল চেম্বারে গিয়ে হাজির তুহিন। যাওয়ার আগে অবশ্য তিনি ফোন করে কনফার্ম করেছিলেন। একটি বহুতল ভবনের নিচ তলায় ল চেম্বারের এক নারী বসে আছেন চেয়ার টেবিল নিয়ে। সেই মহিলার কাছে গিয়ে তুহিন ল্যাপটপ বিক্রি করবেন বলে জানান। মহিলা তার ল্যাপটপ নিয়ে উপরে তার স্যারের কাছে নিয়ে যান। নিচে এক কাপ চা দিয়ে বসিয়ে যান তুহিনকে। মহিলার কোনো খবর নেই। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বসে অস্থির তুহিন। তিনি দোতলায় সেই ল চেম্বারে যান। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেন। ল চেম্বারের লোকজন হতবাক। যেখান আইনি সহায়তা দেওয়া হয়, সেখানে বেচাকেনার কাজ কেন হবে। কোনো মহিলাও সেখানে কাজ করে না বলে তুহিনকে জানানো হয়। তুহিন নিশ্চিত হন, তিনি প্রতারণার শিকার। ল্যাপটপ খুইয়ে বাসায় ফিরেন তুহিন। পরদিন তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।

সম্প্রতি অনলাইনে জিনিসপত্র বেচাকেনা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সারা দেশে। অনেকেই সময় বাঁচানোর জন্য অনলাইনে জিনিসপত্র কিনে থাকেন। এমন সুযোগটিকেই বেছে নেয় প্রতারকরা। প্রতারিত অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। এমনই অসংখ্য প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশের কাছে। এমন একটি ঘটনার তদন্তের পর পুলিশ নারীসহ বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, আইনি সেবা কেন্দ্র ব্যবহার করে বেআইনি কার্যকলাপের দায়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরা অনলাইনে জিনিসপত্র বেচাকেনার কথা বলে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারক চক্রটির হাতে অনেকেই দামি ল্যাপটপসহ মূল্যবান সামগ্রী খুঁইয়েছেন।

পুলিশ জানায়, সম্প্রতি অনলাইন শপিং বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। বাজারে যাওয়ার ঝামেলা নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই দরদাম ঠিক করে জিনিসপত্র কেনা সম্ভব। এমন সুযোগে গ্রেফতারকৃতরা প্রতারণার নতুন ফাঁদ পাতে। প্রতারকরা দামি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ক্রয়-বিক্রয়ে ইচ্ছুকদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করে। তাদের টার্গেট বিক্রেতারা। তাদের কাছে দামি ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের মোহাম্মদপুর, গ্রিন রোড ও এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন ল চেম্বারে আসতে বলত। এতে ক্রেতার মনে স্বাভাবিক কারণেই বিশ্বাস জন্ম নিত। কারণ ল চেম্বারে প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বিক্রেতাদের মনেও আসত না।

প্রতারকরা নিজেদের নানা পেশার মানুষ বলে পরিচয় দিত। শুধু সেবার জন্য তারা এমন কাজটি করছে বলে বিক্রেতাদের বলত। প্রথম প্রথম বিক্রেতারা বিশাল ল চেম্বারে গিয়ে মুগ্ধ হতেন। আলিশান অফিসে সামান্য ল্যাপটপ বা দামি মোবাইল বেচা বিক্রি নিয়ে প্রতারণা হতে পারে, এমন বিষয় বিক্রেতার মনেও আসত না। প্রথম দফায় না হলেও দ্বিতীয় দফায় বিক্রেতা ঠিকই বিক্রির জন্য দামি ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনটি নিয়ে যেত। আর যোগাযোগের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকত সুন্দরী নারীদের।

পোশাকে কেতাদুরস্ত নারী ল চেম্বারের নিচে বসে থাকত। বিক্রেতা সেখানে গেলে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া জিনিসটি আগে দেখত। দেখার পর এমন একটি ভাব করত, যেন বস জিনিসটি পছন্দ করবেন কিনা, সন্দেহ আছে। তারপরেও তিনি যেহেতু জিনিসটি কষ্ট করে নিয়ে এসেছেন, তাই একবার বসকে দেখিয়ে নিয়ে আসি। এমন কথা বলে ল্যাপটপ বা দামি মোবাইল ফোনটি বসকে দেখানোর কথা বলে ওপর তলায় নিয়ে যেত। আর যাওয়ার আগে বিক্রেতাকে চা কফির আপ্যায়নে ব্যস্ত রাখত। জিনিস নিয়ে সেই নারী তার বসকে সঙ্গে অন্য লিফট বা সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত সটকে পড়ত। বিক্রেতা অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ল চেম্বারে গিয়ে অভিযোগ করতেন। ল চেম্বারে স্বাভাবিক কারণেই নানা শ্রেণি পেশার মানুষের ভিড় থাকে। কে কোন কাজে, কার কাছে আসে, তা অনেকেই খবরও রাখে না। প্রতারণার শিকার ব্যক্তির অভিযোগে হতভম্ব ল চেম্বারের লোকজন। বিক্রেতা প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে এলিফ্যান্ট রোডে একটি ল চেম্বারে।

তদন্তকারী দল বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে তদন্ত করতে ওই চেম্বারে যায়। ল চেম্বার ব্যবহার করে প্রতারণার বিষয়টি একজন ব্যারিস্টার বুঝতে পারেন। তিনি ল চেম্বারের সব সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে তুলে দেন। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে আফসানা ও তানভীর নামে দুজনকে গ্রেফতার করে। আর এ দুজনের তথ্যমতে প্রধান প্রতারক রানাকেও গ্রেফতার করা হয়।

 

সর্বশেষ খবর