ঠাকুরগাঁওয়ে সারি সারি গাছে থোকা থোকা মাল্টা। একেকটি গাছে ৭০টি থেকে ১০০টি পর্যন্ত। কোনো কোনোটিতে তারও বেশি। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে অনেক গাছ। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের বেলাল হোসেনের বাগানের দৃশ্য এটি। তিনি একা নন, এই এলাকার শতাধিক চাষি মাল্টা চাষ করছেন। মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন নতুন নতুন চাষি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৪৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা-কমলা আবাদ হচ্ছে। বেলাল হোসেন পেশায় একজন শিক্ষক। শখের বশে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৫ সালে হরিপুর উপজেলা কৃষি বিভাগে যোগাযোগ শুরু করেন। সে সময় হরিপুরে সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট চলছিল। আগ্রহ দেখে কৃষি বিভাগ তাঁকে মাল্টা-কমলা চাষের প্রশিক্ষণ শেষে বারি মাল্টা-১ জাতের ৭৫টি, ৫টি কমলা লেবু, ২০টি কলম্ব লেবু, ১০টি বাতাবি লেবু চারা দেয়। পরে তিনি চারাগুলো বাড়ির পেছনের একখণ্ড জমিতে রোপণ করেন। এরপর শুরু হয় পরিচর্যা। গত বছর থেকে বাগানের তিন-চতুর্থাংশ মাল্টা গাছে ফল ধরতে শুরু করে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে কিছু মাল্টা বিক্রিও করেন। ওই ফল খেতে সুস্বাদু হওয়ায় তিনি সে বছর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরও দুই একর জমিতে মাল্টার নতুন বাগান করেন। এ মৌসুমে ফল এসেছে। হরিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নইমুল হুদা সরকার জানান, মার্চ-এপ্রিল মাসে বারি মাল্টা-১ গাছে ফুল আসে। আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। ৫-৬টা মাল্টা ওজনে এক কেজি হয়।
ঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একটি পরিণত গাছে গড়ে ১৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। বেলালের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, গাছে গাছে ঝুলছে সবুজ মাল্টা। বেলাল মাল্টা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত। এ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে গাছ থেকে একটি মাল্টা তুলে নিয়ে কেটে হাতে দিলেন। ফলটি সবুজ হলেও ভীষণ রসাল ও মিষ্টি লাগল খেতে। তিনি বলেন, বাগানে মানবদেহে ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশক বা সার ব্যবহার করি না। ভেষজ কীটনাশক তৈরি করে পোকামাকড় দমন করি। বেলাল বলেন, আমরা যারা মাল্টা চাষ করেছি, তারা এখনো বাজার সৃষ্টি করতে পারিনি। তাই এলাকার লোকজনের কাছেই প্রতি কেজি মাল্টা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছি। বাড়ির পাশের ৫০ শতক জমিতে মাল্টা বাগান করেছেন আল মামুন চৌধুরী। এ বছর তাঁর বাগানের ২৮টি গাছে ফল ধরেছে। তিনি বলেন, অনেকেই এখন আমার মাল্টা বাগান দেখতে এসে নিজেরা বাগান করতে চাচ্ছেন। তাঁর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মাল্টার ভারে গাছের ডালগুলো নুয়ে পড়েছে। আল মামুন বলেন, সরকার মাল্টা উৎপাদনে পৃষ্ঠপোষকতা করার পাশাপাশি বাজারজাতের ব্যবস্থা করে দেয়, তবে দেশের চাষিদের আগ্রহ বেড়ে যাবে। আর বিদেশ থেকে মাল্টা আমিদানি করতে হবে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আফতাব হোসেন বলেন, মানুষ মনে করতেন, মাল্টা বিদেশি ফল। কিন্তু এখন মানুষের ধারণা পাল্টেছে। মাল্টা-কমলা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সাধারণ কৃষকদের মাঝে বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরিতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। মাল্টা চাষ হচ্ছে শুনে হরিপুরের বেলালের বাগান পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, দেখে খুবই ভালো লাগছে। মাল্টা চাষের বিস্তারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।