মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভোটের হিসাব-নিকাশ মেলাচ্ছে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

ভোটের হিসাব-নিকাশ মেলাচ্ছে আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী ৩ জানুয়ারি নির্বাচিত সব এমপি শপথ এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গঠন করা হবে মন্ত্রিসভা। ভূমিধস বিজয়ের পর আগামী পাঁচ বছর সরকারের পরিকল্পনা কী হবে সে নিকাশ-নিকাশ করছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের আনন্দ উল্লাস না করে শুকরিয়া আদায় করতে বলা হয়েছে। বিরোধীদের সঙ্গে কোন্দল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্য, উন্নয়নে আস্থা, সঠিক মনোনয়ন, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের একক সমর্থন এবং গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকার কারণেই বিশাল জয় এসেছে। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যে সাধারণ ভোটারদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়াই নৌকা প্রতীকের বিজয়ী হয়েছে। তরুণ-তরুণীরা কেন্দ্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেওয়া আর নিজ দলের কর্মী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা-এটা আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয়ের সহায়ক হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু নির্বাচন নিয়েই হিসাব-নিকাশ করে না। পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে চিন্তা করে। আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, আমরা দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চাই, আমরা এসব নিয়েই ভাবছি।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চায় বলেই আমরা সবার সমর্থন পেয়েছি। সূত্রমতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পার হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। দলীয় সভানেত্রী সিরিয়াস ছিলেন দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে। তাই তিনি বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে ছয় মাস অন্তর অন্তর জরিপ চালিয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়। এ ছাড়াও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগ অনেক এগিয়ে ছিল। সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে তুলে ধরা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দুর্নীতির চিত্র। ফলে তরুণ-তরুণীরা কেন্দ্রে ভোট দেয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। এটাও ইতিবাচক ফল দেয়। জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী কর্মকা  মনিটরিং করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেখানেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল, তাদের বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। ধানমন্ডিতে বসে দলের নির্বাচনী পরিচালনা করেন দলের সিনিয়র নেতারা। সবমিলে এবার ঐক্যবদ্ধভাবে পরিকল্পিত কাজ করায় জয় সহজ হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্য, সরকারের উন্নয়নের কারণেই বড় জয় এসেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অন্যদিকে আগুন সন্ত্রাস, লুটপাট, দুর্নীতির কারণে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশের জনগণ।’ তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন করলে দেশের মানুষ যে সমর্থন দেয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তার প্রমাণ। গত দশ বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকার যে উন্নয়ন করেছে, দেশবাসী ভোটের মাধ্যমে তার প্রতিদান দিয়েছে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার সরকার গঠনের পর থেকেই জোর দিতে হবে সুশাসন নিশ্চিত করতে। সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে দেশের মানুষ বারবার আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। তারা বলছেন, দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য ব্যবসায়ী সমাজ, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবার আওয়ামী লীগকে এককভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। অতীতে এমন সাপোর্ট কোনো সরকারই পায়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কর্মকা ই নৌকার দিকে সাধারণ ভোট টেনে আনে। নতুন প্রজন্মও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পক্ষপাতী ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আওয়ামী লীগ। আর তরুণ ভোটাররাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় বিশ্বাসী। এত বড় বিজয়ের পেছনে দলীয় নেতাদের বিরোধ ও বিদ্রোহী প্রার্থী কঠোর হস্তে দমনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের থেকে স্থানীয় নেতাদের দূরত্ব কমিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী কাজ করার ফলেই নৌকার বিজয় হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য দেশবাসী নৌকায় ভোট দেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ। দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্য, সব মহলের সমর্থন থাকার কারণেই আমাদের বিশাল জয় এসেছে। আগামীতে যেন এই যাত্রা অব্যাহত থাকে সে প্রত্যাশা দেশবাসীর কাছে।

সর্বশেষ খবর