শনিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নতুন বছর নতুন আইনে মাদকবিরোধী অভিযান

আলী আজম

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নতুন আইনে নতুন বছরে (২০১৯) মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হচ্ছে। গেল বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে মাদকের নতুন আইন কার্যকর হয়েছে। নতুন এ আইনে ইয়াবা পাচার মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া মাদকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে সিসা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ইতিপূর্বে মাদকের বিরুদ্ধে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু হলেও নতুন আইনকে সামনে রেখে এই অভিযানের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের মে মাসে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানের সময় তিন শতাধিক নিহত এবং দেড় লাখ ব্যক্তি গ্রেফতার হয়। এরপরও মাদক আসছে। পরিবর্তন হচ্ছে রুট। মাদকের লাগাম টানতে তৎপর থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে অভিযান কিছুটা থমকে গিয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ইতিমধ্যেই অনেক শীর্ষ মাদককারবারি গ্রেফতার কিংবা অভিযানের সময় বন্দকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে সক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাদক কারবারিদের সব ধরনের কৌশল মাথায় নিয়ে নতুন আঙ্গিকে অভিযান কার্যকর করা হবে। এক্ষেত্রে শীর্ষ যেসব মাদক ব্যবসায়ী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তাদের গ্রেফতারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া হবে তাদের আস্তানা। গত ২ জানুয়ারি নির্বাচন পরবর্তী শুভেচ্ছা গ্রহণের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকবিরোধী অভিযানে জিরো টলারেন্স নীতিতে চালানোর ঘোষণা দেন। অন্যদিকে বেশিরভাগ সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল নিজ এলাকাকে মাদকমুক্ত করার। জয়ী হওয়ার পর তারাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ জানান, নতুন বছরে মাদক নির্মূলই হবে মূল লক্ষ্য। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, মাদকের বিস্তার এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এখন হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় এটা সম্ভব হচ্ছে। তবে মাদকের সিন্ডিকেটের মূল হোতারা কমই ধরা পড়েছে। এবার তাদের ধরার পালা।

ডিএনসির মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছি। মাদকের নতুন আইন পাস হওয়ার পরে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে ডিএনসি কর্মকর্তারা। মাদকের নেপথ্য নায়কদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করবে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে গডফাদারদের তালিকা আপডেড করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানা দেবে কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছর শুরুর চার দিনে আড়াই শতাধিক মাদক মামলার আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। চার দিনে ফেনী, কুমিল্লা ও মেহেরপুরে নিহত হয়েছে চার মাদক ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে ৪৫ জনকে গ্রেফতার করে ডিএমপি। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার সাভার থেকে ৭০ কেজি গাঁজাসহ ৪ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার র‌্যাব-২।

জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৮টি মামলা করেছে ডিএনসি, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে আসামি করা হয়েছে সাত লাখ দুই হাজার ৩৯৯ জনকে। বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ইয়াবা। এর পরিমাণ ১৬ কোটি ১২ লাখ ৩৭ হাজার পিস।

এছাড়া হেরোইন জব্দ হয়েছে ১৮০৫ কেজি, কোকেন ৪০ কেজি, আফিম ১৪৪ কেজি, গাঁজা ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৭ কেজি, ৭৯ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ বোতল ফেনসিডিল, ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ১১০ বোতল বিদেশি মদ, ৯ লাখ ৯০ হাজার ২৬৩ ক্যান বিয়ার, ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৯ অ্যাম্পুল ইনজেকটিং ড্রাগ জব্দ করা হয়েছে। চলো যাই যুদ্ধে- মাদকের বিরুদ্ধে এ স্লোগানে গত বছরের ৪ মে থেকে র‌্যারের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। ১৮ মে থেকে পুলিশ এ অভিযান জোরদার করে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাদকের এক লাখ ৬ হাজার ৭৩০টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ৩২২ জনকে। ১১ মাসে তিন কোটি ৪৯ লাখ এক হাজার ৪৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের কারণে অভিযানে কিছুটা ভাটা পড়লেও শিগগিরই বড় পরিসরে ফের অভিযান শুরু হবে। অভিযানের কৌশলেও পরিবর্তন হতে পারে। এতে মাদকের গডফাদাররা ধরা পড়বে। নতুন আইনে নতুন বছরে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সব বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযানে জোরালো হবে। কোনো মাদক কারবারিকেই ছাড় দেয়া হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর