শুক্রবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
মিয়ানমারের তমব্রু খালে বাঁধ নির্মাণ

নাইক্ষ্যংছড়ির একাংশ ডুবে যাবে

কবির হোসেন সিদ্দিকী, বান্দরবান

নাইক্ষ্যংছড়ির একাংশ ডুবে যাবে

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুমের ওপারে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত  ঘেঁষে তমব্রু সেতুর নামে বাঁধ নির্মাণ করছে মিয়ানমার। সেতুটি নির্মাণ হলে    ঘুনধুমের কুনাকপাড়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকা        তলিয়ে যেতে পারে। ডুবে যেতে পারে নো-ম্যানস  ল্যান্ডের রোহিঙ্গা ক্যাম্প। বাঁধের কারণে সীমান্তে বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার মানুষের পানিবন্দী হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তারা জেনেছেন। খোঁজখবর নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। ঘুনধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, তমব্রু সেতুটি নির্মিত হলে বর্ষা মৌসুমে শূন্যরেখাসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনারপাড়া সীমান্ত এলাকার কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাবে। মূলত সেতুর নামে বাঁধ নির্মাণ করছে মিয়ানমার। ঘুনধুম ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি রফিক আহমদ জানান, বর্ষা মৌসুমে খালের পানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে এপারের কৃষিজমি ও পুরো এলাকা পাহাড়ি ঢলে ডুবে যাবে। স্থানীয়রা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বিজিবি-৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান খান বলেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের সীমান্তের অভ্যন্তরে তমব্রু খালে একটি সেতু নির্মাণ করছে। কেন এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে জানি না। আমরা পরিস্থিতি লক্ষ্য রাখছি।’

তমব্রু নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশিরা বলছেন, তমব্রু সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তাড়াতে নতুন প্রচেষ্টা শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। কারণ এমন একটি জায়গায় সেতু নির্মাণের প্রয়োজন নেই। এটি নামে মাত্র সেতু নির্মাণ। আসলে আগামী বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল আটকে দিয়ে তমব্রু সীমান্তে খালের পাশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরাতে এমনটি করছে মিয়ানমার সরকার। এর আগেও তমব্রু সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরাতে নানা চেষ্টা করেছিল মিয়ানমার। ওই সীমান্তে দেশটির ভিতরে ঘন ঘন গুলিবর্ষণ, রাতে কাঁটাতার ঘেঁষে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশসহ নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এখন নতুন করে খালে সেতু তৈরির নামে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সীমান্তে বসবাসরত স্থানীয় অধিবাসীদের বাসস্থান ও তাদের কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্তপথ রয়েছে ২৭১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২০৮ কিলোমিটার স্থলপথ ও ৬৩ কিলোমিটার জলসীমান্ত রয়েছে। তেমনই এক সীমান্ত বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম ইউনিয়নের কুনারপাড়া সীমান্তের তমব্রু খালের পাশে নো ম্যাসন ল্যান্ডে আশ্রয় নেয় প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে এসে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এই রোহিঙ্গারা খালের পাড়ে গড়ে তুলেছে একটি বস্তি। এর পর থেকে মিয়ানমার সরকারের দুষ্টি এই রোহিঙ্গা বস্তির ওপর। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুমে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, ‘নো ম্যানস ল্যান্ডের মিয়ানমারের ভিতরে যে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে মনে হয় এটি কোনো সড়কের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে না। শুধু শুধু তমব্রু খালে সেতু নির্মাণ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে আগামী বর্ষা মৌসুমে খালের পাহাড়ি ঢল আটকে দিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গাদের সরানোর চেষ্টা শুরু করছে মিয়ানমার। এতে করে শুধু রোহিঙ্গারা সরবে না, আমরা যারা বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছি, আমরাও সবাই পানিবন্দী হয়ে পড়ব। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ অঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়বে।’ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর সহিংসতার পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তবে কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়ে এবং সেখানেই আশ্রয়শিবির তৈরি করে অবস্থান নেয়। ওই বছর নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম সীমান্ত পয়েন্টে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে সরিয়ে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে আসে। তবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা এখনো অবস্থান করছে। কিন্তু মিয়ানামার সরকার নো ম্যানস ল্যান্ডের এই ভূমি তাদের দাবি করে সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রোহিঙ্গাদের। একই সঙ্গে তাদের নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে মিয়ানমার। কিন্তু রোহিঙ্গারা সরে না গিয়ে এই নো ম্যানস ল্যান্ডেই অবস্থান করছে। এসব রোহিঙ্গাকে বর্তমানে চিকিৎসাসহ মানবিক সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশে স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি, রেড ক্রিসেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।

সর্বশেষ খবর