শনিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

শ্রীমঙ্গলে সিতেশ দেবের নান্দনিক চিড়িয়াখানা

মোস্তফা কাজল, শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে

শ্রীমঙ্গলে সিতেশ দেবের নান্দনিক চিড়িয়াখানা

শ্রীমঙ্গলে সিতেশ দেবের নান্দনিক চিড়িয়াখানা এক নামে সারা দেশে পরিচিত। এ চিড়িয়াখানাটি শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের কাছাকাছি। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রুশপুরে অবস্থান। প্রায় দুই একর এলাকাজুড়ে সিতেশ রঞ্জন বাবুর মৎস্য খামারের বাড়িতে অবস্থিত। এক সময়ের দুর্র্ধর্ষ শিকারি সিতেশ রঞ্জন দেব সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এ মিনি চিড়িয়াখানাটি। বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকসহ বিদেশি অনেক পর্যটকও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভিড় করেন চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানাটি বর্তমানে পরিচালনা করেন সিতেশ রঞ্জন দেবের ছেলে সজল দেব। এ চিড়িয়াখানায় ঢুকতে ২০ টাকার টিকিট কিনতে হয়। প্রবেশ পথের সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বন্যপ্রাণী সেবা কেন্দ্র (চিড়িয়াখানা)। বৃহস্পতিবার বন বিভাগের বন্যপ্রাণী শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা ঘুরে গেছেন এ চিড়িয়াখানা। এটিকে তারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিতে চান এমনটাই জানালেন বন বিভাগের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ফিরোজ কবির।

শ্রীমঙ্গলে মিশন রোডের বাসভবনে ১৯৭২ সালে শুরু করা সিতেশ দেবের চিড়িয়াখানাটি বর্তমানে স্থানান্তর করে বর্তমান ঠিকানায় আছে। তার মিনি চিড়িয়াখানায় রয়েছে দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় কিছু প্রাণী। বর্তমানে ভাল্লুক, পাহাড়ি ময়না, গন্ধগকোল, হরিয়াল, লক্ষণ টিয়া, ধনেশ, গুইসাপ, উরুক্কু কাঠবিড়ালি, বিরল প্রজাতির সাদা আলবিনো বাঘ, মেছো বাঘ, গোল্ডেন টারটইল বা সোনালি কচ্ছপ,  সোনালি বাঘ, লজ্জাবতী বানর, সাইবেরিয়ান লেজ্জা লামবার্ড, ঘুঘু, বানর, বন্যমথুরা, বন্যমোরগ, সরালি, কালেম, ময়না, বন্য মাছ, অজগর সাপ, মেলর্ড, তিতির, মায়া হরিণ, সজারু, ইন্ডিয়ান সোনালি বানর, বন্য খরগোশ, সাদা খরগোশ প্রভৃতি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে সোনালি কচ্ছপ উল্লেখযোগ্য। এ প্রাণীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এরা গাছে বসবাস করে। ভুলেও কখনো পানিতে নামে না। সব সময় শুকনো খাবার খায়। অপর আকর্ষণীয় প্রাণী হচ্ছে লজ্জাবতী বানর। এ প্রাণী দিনের বেলায় মাথা নিচু করে থাকে। অনেক সময় চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। সাধারণত দিনের বেলায় কোনো খাবার খায় না। রাতের আঁধারে স্বাভাবিক চলাফেরা করে। খাবার গ্রহণ করে রাতে। এটি একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। এ চিড়িয়াখানার আরেক আকর্ষণ সোনালি বাঘ। বিলুপ্ত প্রজাতির এই প্রাণীদের আবাস মূলত গভীর জঙ্গলে। আকারে ছোট এ বাঘ অত্যন্ত হিংস্র। সাদা বাঘ জাতীয় চিড়িয়াখানা ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের মতো এই মিনি চিড়িয়াখানায়ও আছে। এসব কারণে দুর্লভ প্রাণী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে সাদা বাঘকে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় এসব প্রাণী দেখে আসতে পারেন। অভিজ্ঞতার

ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে প্রাণীগুলোর বৈশিষ্ট্য জেনে নিতে পারেন সদা হাস্যোজ্জ্বল সিতেশ রঞ্জন দেবের কাছ থেকে। জানতে চাইলে সিতেশ দেব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি বন্যপ্রাণী সেবার জন্য এ মিনি চিড়িয়াখানাটি চালু করেছি। এ অঞ্চলে অনেকে বন্যপ্রাণী শিকার করতে গিয়ে হত্যা করে। আর যেসব প্রাণী আঘাত প্রাপ্ত হয়ে বেঁচে থাকে আমি তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর