সোমবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সরকারের চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

সরকারের চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোই নতুন সরকারের ‘পুরনো’ চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদের শেষ দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সেই মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়নি। নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগই চতুর্থবারের মতো দেশের শাসনভার পেয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের এই নতুন সরকারের কাছে এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি রয়েই গেছে। মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার ভেটো ও রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে গত বছরের নভেম্বরে শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। তাই নতুন সরকারের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয় হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বছর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের সূচনা করা বড় কাজ হিসেবে দেখছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার। দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী, গত বছরের মধ্য নভেম্বরে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, স্বাধীন কর্মপরিবেশ, নাগরিকত্ব নিয়ে রোহিঙ্গাদের অনীহা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হওয়ার দাবি করায় বন্ধ হয়ে যায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। কিন্তু উখিয়া-টেকনাফে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় অনেকটা ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। এ বিষয়ে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, এ বছর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের সূচনা করাটা হবে একটি বড় কাজ।  দুই দেশের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের শেষ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সূচনা করা এবং সে সম্পর্কিত যাবতীয় প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে না চাওয়ায় গত নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। তারপরও আমাদের প্রত্যাবাসনকে গুরুত্ব দিতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চুক্তি অনুযায়ী, যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকাভুক্ত ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গার মধ্যে প্রথম দফায় গত ১৫ নভেম্বর ১৫০ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা আজও হয়নি। তিনি বলেন, ১৯৯২ সালেও মিয়ানমার সেই সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার নামে নাটক সাজিয়েছিল। এবারেও তারা একই পন্থা নিয়েছে। আর সে জন্য নতুন সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, দশকের পর দশক ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট তাদের ওপর নতুন করে সামরিক বাহিনীর নির্মম নিপীড়ন শুরু হলে ২৫ আগস্ট হতে বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা।  সেই বছরেই অন্তত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর দুই দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন হয়। এরপর বিভিন্ন পরিসরে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ভয়-তারা ফেরত  গেলে আবারও তাদের ওপর নির্যাতন করা হবে।

সর্বশেষ খবর