মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছোট মামলার আদালত বিলুপ্ত চায় আইন কমিশন

১৩১ বছরের পুরনো আইনটি এখন অকার্যকর ১১ জেলায় কোনো মামলাই বিচারাধীন নেই

আরাফাত মুন্না

বিচারকদের ওপর চাপ কমাতে ১৩১ বছরের পুরনো ‘দ্য স্মল কজেস কোর্টস অ্যাক্ট, ১৮৮৭’ বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে আইন কমিশন। একই সঙ্গে আইনটি অকার্যকর ও অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে এই আইনের আওতায় সারা দেশে থাকা আদালতগুলোও বিলুপ্ত করতে বলেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কমিশনের এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রচলিত সবচেয়ে কম ব্যবহৃত আইনসমূহের মধ্যে এ আইনটিও অন্যতম। এ আইন প্রণয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল, ছোট মামলার আদালত-সংক্রান্ত তৎকালীন আইনসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ একত্রীকরণ করা।

১৮৮৭ সালে তৎকালীন ভারত সরকার ‘দ্য প্রভেনশিয়াল স্মল কজেস কোর্টস অ্যাক্ট, ১৮৮৭’ নামে আইনটি পাস করে। ওই সময় এ আইনের অধীনে গঠিত আদালতে ছোট ছোট বিষয়ে জনগণ স্বল্প খরচে দ্রুততম সময়ে মৌলিক ন্যায়বিচার পেতে থাকেন। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রভেনশিয়াল শব্দটি বাদ দিয়ে ‘দ্য স্মল কজেস কোর্টস অ্যাক্ট, ১৮৮৭’ করা হয়। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩১ বছরের পুরনো এ আইনটির কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। নির্দিষ্ট মূল্যমানের বিভিন্ন শ্রেণির দেওয়ানি মামলা বিচারের এখতিয়ার এ আইনের অধীনে গঠিত আদালতের থাকলেও বর্তমানে কেবল বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত মামলাই এ আদালতে দায়ের করা হয়। এ আইনের উদ্দেশ্য ছোট ছোট দেওয়ানি বিরোধ সহজে, স্বল্প খরচে ও দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করা। কিন্তু এ আইনে মামলা নিষ্পত্তির কোনো সময়সীমা না থাকায় বছরের পর বছর মামলা বিচারাধীন থেকে পক্ষদের হয়রানি ও অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ আইনের অধীনে আদালতগুলোতে দেওয়ানি এখতিয়ার সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ ‘গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬’-এ দেওয়ানি এখতিয়ার রয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন’ও রয়েছে। ফলে এ আইনটি অপ্রয়োজনীয় ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এসব আদালতের মামলা-সংক্রান্ত বিগত ১০ বছরের একটি পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা গেছে, এ আইনের আওতায় সারা দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে আদালত রয়েছে। এসব আদালতে গত ১০ বছরে মাত্র ৪ হাজার ৬৬১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩৩৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বরগুনা, ঠাকুরগাঁও ও শেরপুরে আবার ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ এর মধ্যে একটি মামলাও দায়ের হয়নি। আর ১১ জেলায় কোনো মামলাই বিচারাধীন নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা ফওজুল আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে অনেক আইনই রয়েছে, ‘যেগুলোর এখন আর প্রয়োজনীয়তা নেই। অপ্রয়োজনীয় আইনগুলোকে বাদ দিতে পারলে বিচারকদের ওপরও চাপ কমবে। কমিশন সেসব আইন নিয়ে কাজ শুরু করেছে। আমাদের এই প্রতিবেদনটিও এরই ধারাবাহিকতা।’ তিনি বলেন, ‘এ আইনটি যখন করা হয়েছিল, মানুষ তখন এর সুফল পেয়েছে। তবে এখন এর চেয়েও যুগোপযোগী আইন আমাদের রয়েছে। ফলে পুরনো আইনটি বোঝা হয়ে গেছে। তাই আমরা আইনটি বিলুপ্ত করতে সুপারিশ করেছি।’

সর্বশেষ খবর