বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বৈচিত্র্য ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে

অবকাঠামো নির্মাণ, পরিবহন-যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে বাড়ছে বিনিয়োগ, কৃষিজ ও অকৃষিজ কর্মকাণ্ডের ব্যাপক সম্প্রসারণ

রুহুল আমিন রাসেল

বৈচিত্র্য ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে

বৈচিত্র্য ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের অগ্রসরমান গ্রামীণ অর্থনীতিতে। শহরের পাশাপাশি এখন গ্রামেও বাড়ছে বিনিয়োগ। কৃষিজ ও অকৃষিজ কর্মকাণ্ড  বহুগুণ এবং বহুমুখী সম্প্রসারণ হয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ পরিবহন ও যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার পাওয়ায় গ্রামীণ জনপদে বিনিয়োগ বেড়েই চলছে। এক্ষেত্রে গ্রামীণ পরিবারসমূহের আয় ও কর্মসংস্থান বাড়াতে অকৃষি খাতের অবদানও বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলের বিগত ১০ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি ৫ দশমিক ৫৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। মাথাপিছু আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৮৪৩ থেকে ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার পৌঁছেছে। বিনিয়োগের গতি কিছুটা কম হলেও ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ। ১০ বছর আগের চরম ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা যেমন বেড়েছে, তেমনি মাথাপিছু আয়ও বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সব মিলিয়ে বিশ্ব এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

তথ্যমতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষি খাত জিডিপিতে ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখছে। খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এক ও দুই ফসলি জমি অঞ্চল বিশেষে প্রায় চার ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ এবং শ্রমশক্তি ৬০ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। গ্রামের উন্নয়নে প্রথমে আসে কৃষি উন্নয়ন- কৃষিভিত্তিক শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের উন্নয়ন। দেশীয় বাজারের সঙ্গে বিদেশেও বাংলাদেশি কৃষিপণ্য প্রবেশের বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিভিত্তিক শিল্পে স্বল্পমাত্রার সঞ্চালনা ও প্রেষণাই গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক বিস্ফোরণ সৃষ্টি করতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের ডায়নামিকস অব রুরাল গ্রোথ ইন বাংলাদেশ : সাসটেইনিং প্রোভার্টি রিডাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়- অকৃষি খাতের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। অকৃষি খাতের উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। কৃষি খাতে ১০ শতাংশ আয় বাড়লে, অকৃষি খাতে ৬ শতাংশ বাড়াবে। গ্রামীণ অর্থনীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি শক্তিশালী উৎস, যা টেকসই দারিদ্র্য নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ উন্নয়নে যে নীরব গতিশীলতা এসেছে, তা যেন এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন করেছে। সরকারের এই সাফল্যের সুফল নিয়ে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই অর্থনীতি বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল নয়। খাদ্যশস্য উৎপাদন, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, অর্থনৈতিক ডিজিটালাইজেশনে সরকারের অনেক সাফল্য আছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে গ্রামীণ জনপদে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিয়ে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়লে অর্থনীতি আরও বদলে যাবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার গত ১০ বছরে সাফল্যের সঙ্গে গ্রাম ও শহরে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ঘাটতি পূরণ হয়েছে। আর সরকার যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, এখন পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখতে চায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। সরকার সেটা করতে পারলে বদলে যাবে বাংলাদেশ। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের ইশতেহারে নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবেও গ্রামকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ এই স্লোগানে ইশতেহারে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করে বলা হয়েছে- গ্রামকে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে বরাবরই বিবেচনা করে এসেছে। সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ?মাগতভাবে দূর করার কথা বলা হয়েছে। এই লক্ষ্যে ইশতেহারে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর করা হবে। বর্তমান সরকারের প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতিও দেখা গেছে ইশতেহারে। এতে লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলা হয়- উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সব সুবিধাদি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইশতেহারে আরও বলা হয়- গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরও বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপ ভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা দেওয়া হবে। গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবা কেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হালকা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর