বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আমি মন্ত্রীর পিএস বলছি

মির্জা মেহেদী তমাল

আমি মন্ত্রীর পিএস বলছি

সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের মাস্টার্সের (বাংলা) এক ছাত্রীর দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। প্রতি সপ্তাহে দুটি ডায়ালাইসিস দেওয়া লাগে। অসচ্ছল পরিবারটি চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সব হারিয়ে ফেলেছে। ছাত্রীর বাবা তার মেয়েকে একটি কিডনি দিতে চান। তবে এই কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রয়োজন মোটা অংকের টাকা। এ কারণে সমাজের হৃদয়বানদের সাহায্য চেয়েছেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম। সাহায্য পাঠাতে ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়েছে। এ ছাড়া উল্লেখ করা হয়, কেউ চাইলে সরাসরি সাহায্য করতে পারবেন বিকাশ নাম্বারে।

ছাত্রীটির সাহায্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ফোন আসছে বিভিন্নজনের কাছ থেকে। অনেকেই সমবেদনা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ সাধ্যমতো সাহায্যও করছেন। এমনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া একজন ভদ্রলোক ফোন দেন ছাত্রীর বাবার ফোনে। হ্যালো, ‘আমি অমুক মন্ত্রীর পিএস বলছি। মন্ত্রী মহোদয় আপনার মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতে চান। মন্ত্রীর তহবিল থেকে এই সাহায্য করা হবে। চিকিৎসার জন্য ৫-৭ লাখ টাকা পাবেন। তবে এর আগে আপনাকে নির্দিষ্ট আবেদন ফরম কিনতে হবে। এ জন্য ২ হাজার ৪০ টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিন।’

নিজেকে মন্ত্রীর এপিএস তামিম পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলছেন। ছাত্রীর জন্য একটি ফান্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। তামিম একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেন বিকাশ করতে। তিনি আরও বলেন, অফিস চলাকালীন তাদের রোগীকে নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় বড় সাহায্যের সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যাবে। পরে তামিম নিজ থেকেই ফোন দিয়ে আবেদন ফরম বাবদ ২ হাজার ৪০ টাকা দেওয়ার কথা জানান। তখন ছাত্রীর বাবার সন্দেহ হয় এরা প্রতারকচক্র। মন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে জানা যায়, বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রতারক চক্রের কাজ। সেখান থেকে এদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হতে বলা হয়। ছাত্রীর বাবার কাছে এমন আরও একটি ফোন আসে। একইভাবে সাহায্যের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা বাবদ বিকাশে ২ হাজার ৮০০ টাকা পাঠাতে বলে। ছাত্রীর বাবা বিষয়টি পুলিশকে জানান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি প্রতারক চক্র পত্রিকায় প্রকাশিত সাহায্যের আবেদনকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। ভুক্তভোগী পরিবারের অসহায়ত্তকে পুঁজি করে চক্রটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অসহায় পরিবার একটু সাহায্যের আশায় প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছে- এমন অভিযোগ বহু রয়েছে পুলিশের খাতায়। ইতিমধ্যে মন্ত্রীর এপিএস পরিচয়দানকারী ইসমাইল ভূঁইয়া ওরফে তুহিন নামের এক চাঁদাবাজকে রূপগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া গ্রেফতার হয় প্রধানমন্ত্রীর এপিএস পরিচয়দানকারী শহিদুল ইসলাম নয়ন। শহিদুল ইসলাম নয়ন পুলিশকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর এপিএসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মোবাইল নম্বর রয়েছে তার কাছে। তিনি এপিএসের  একটি ফোন নম্বরের আদলে অন্য একটি অপারেটর থেকে সিম তোলেন। ওই মোবাইল নম্বরে কোম্পানির কোডের একটি ডিজিট ছাড়া অপর ১০টি ডিজিটই প্রধানমন্ত্রীর এপিএসের মোবাইল নম্বরের ডিজিটের মতো। ফলে প্রধানমন্ত্রীর এপিএসের ফোন নম্বর সেভ করা রয়েছে এমন কর্মকর্তাদের কল দিলে তাদের মোবাইল ফোনে আসল এপিএসের নাম ভেসে উঠত। এতে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তারা দ্রুত তার কাজ করে দিতেন। এ ঘটনাটি বেশ কয়েক মাস আগেকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের প্রতারকের সন্ধান পাওয়ামাত্র পুলিশকে খবর দিতে হবে। আর না হয় ট্রিপল নাইনে কল করে পুলিশের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর