শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

দৃশ্যমান হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল

দেশের প্রথম স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নদীগর্ভে বসবে টানেল নির্মাণের অন্যতম উপকরণ ‘টানেল বোরিং মেশিন’ (টিবিএম)। বোরিং মেশিন স্থাপনের পূর্বপ্রস্তুতিও প্রায় শেষ। এর মাধ্যমে শুরু হবে টানেল নির্মাণের মূল কাজ। ইতিমধ্যে টানেলের ৩০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্বপ্নের টানেল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর যৌথভাবে স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনা রাষ্ট্রপতি শিং জিনপিং। জানা যায়, নদীগর্ভে খননের মূল যন্ত্র টানেল বোরিং মেশিন তৈরি হয়েছে চীনে। গত বছর এপ্রিল-মে মাসে এগুলো দেশে আসে। ছোট ছোট আকারে এনে দেশেই সংযোজন করা হয়। বোরিং মেশিন স্থাপনের জন্য টানেলমুখের দুই প্রান্তে জেটি নির্মাণ করা হয়। মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ৩৮৩ একর। ইতিমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয় ২৩২ একর। কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের প্রথম টানেলটি উচ্চক্ষমতার শক্তিসম্পন্ন কারিগরি কাজ। ফলে অনেক সতর্কতা, অনেক ধীর প্রস্তুতি নিয়ে দেখে, শুনে, বুঝে কাজ করতে হচ্ছে। টানেল নির্মাণের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ। ফেব্রুয়ারিতে নদীগর্ভে স্থাপন করা হবে টানেল বোরিং মেশিন।’ উপ-প্রকল্প পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) ড. অনুপম সাহা বলেন, ‘কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে জমি নিয়ে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়। পরে এটি সমাধান হয়ে যায়। জমির মালিকরা সরকারি নিয়মমতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করছেন। বর্তমানে ৮২ শতাংশ অধিগ্রহণ কাজ শেষ। চলমান গতিতে কাজ চললে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’ সরেজমিন দেখা যায়, নদীর উত্তর পাড়ে পতেঙ্গার বিশাল এলাকা টিন দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশাধিকারও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রকল্পে চারটি খননযন্ত্রের মাধ্যমে চলছে ড্রেজিংয়ের কাজ। শেষ হয়েছে ডিএপি সার-কারখানা ও কাফকোর মাঝামাঝি মাঝের চর এলাকায় প্রকল্পের সাইট অফিস, আবাসস্থল ও যন্ত্রপাতি রাখার জন্য মাটি ভরাটের কাজ। একইভাবে নদীর উত্তর পাড়ে পতেঙ্গায় নির্মাণ সরঞ্জাম ও আবাসনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণে চীন থেকে এসেছে দুই জাহাজ উপকরণ। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণ’ শীর্ষক চার লেনের দুটি টিউব-সংবলিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীর তলদেশ দিয়ে ৮৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় (সম্ভাব্য) টানেল নির্মিত হচ্ছে। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজসম্পন্ন টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে। টানেলের অ্যালাইনমেন্ট হবে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে। টানেলের প্রবেশপথ হবে নেভি কলেজের কাছে, বহির্গমন পথ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানা-সংলগ্ন ঘাট। মোট ৯২৬৫ দশমিক ৯৭১ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রকল্পটির মধ্যে টানেলের দৈর্ঘ্য ৩০০৫ মিটার (উভয় দিকের ৪৭৭ মিটার ওপেন কাট ব্যতীত)। টানেলে থাকবে ৯২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি ফ্লাইওভার। এর মধ্যে শহর প্রান্তের ‘এট গ্রেড সেকশন’ হবে ৪৬০ মিটারের আর দক্ষিণ প্রান্তের ‘এট গ্রেড সেকশন’ ৪৪০৩ দশমিক ৯৭১ মিটারের। দেশের প্রথম এই টানেলটি হবে ‘ডুয়েল টু লেন’ টাইপের। টানেল নির্মাণ করা হবে ‘শিল্ড ড্রাইভেন মেথড’ পদ্ধতিতে। জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্র। গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ, আধুনিকায়ন হবে বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, সংযোগ স্থাপন হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে, যুক্ত করা হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে, ত্বরান্বিত হবে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ, বৃদ্ধি পাবে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা ও সুযোগ-সুবিধা, গতি পাবে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ, নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর