শিরোনাম
শনিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

গরিবের ডাক্তার অধ্যাপক লিটু আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

গরিবের ডাক্তার অধ্যাপক লিটু আর নেই

গরিব অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ওষুধ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে গতকাল দিনব্যাপী এ আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু সেই আয়োজনে তিনি         থাকতে পারলেন না। অবশেষে সব ফেলে পরপারে পাড়ি জমালেন গরিবের ডাক্তার খ্যাত রাকিবুল ইসলাম লিটু (৫১)। বেলা ১টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তার অকাল মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ভিড় জমায় আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী। শোকাহত এসব মানুষকে নীরবে চোখের পানি ফেলতে দেখা গেছে। এমনকি অসংখ্য রোগীও নীরবে চোখের পানি ফেলছেন। তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলে রেখে গেছেন। মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুটে যান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপিসহ বিশিষ্টজন থেকে সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ ও বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আবেগঘন স্ট্যাটাস দেয়।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু ছিলেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান। পাশাপাশি গরিবের ডাক্তার হিসেবে খ্যাতিও অর্জন করেন। বাদ মাগরিব উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দ্বিতীয় জানাজা শেষে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিয়মিত কলাম লেখক ছিলেন। ছিলেন চিকিৎসাসেবা নিয়ে একাই একটা যুদ্ধ ইউনিট। গরিব মানুষের জন্যই ছিল তার লড়াই। দরিদ্র রোগীদের কল্যাণে গড়ে তোলেন পেশেন্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। স্বপ্ন দেখতেন এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশের হতদরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার খরচ মেটানোর। ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রোগীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে গেছেন এবং নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ। মানবদরদি এই চিকিৎসক চেম্বারে প্রতিদিন যত রোগী দেখতেন তার অধিকাংশের কাছ থেকেই ফি নিতেন না। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ভিজিটে এসে যেসব ওষুধ দিতেন তা রোগীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন। বহু দরিদ্র হৃদরোগীর জটিল অস্ত্রোপচার বিনা পারিশ্রমিকে করে দিয়েছেন। অসংখ্য রোগীকে বাড়ি ফেরার টাকা পকেট থেকেও দিতেন। ১৫ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেষবারের মতো তিনি লিখেছিলেন- ‘গরিব রোগীদের চিকিৎসা ও অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের সংগ্রাম চলছেই, চলবে। এই সংগ্রামে সমাজের সব পেশার বিবেকবান মানুষদের পাশে চাই। আপনার একদিনের সিগারেটের টাকা একজন হতদরিদ্র রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে।’

সর্বশেষ খবর