রবিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়া মেডিকেল ভবন ধসের ভয়াবহ অনিয়মের চলছে তদন্ত

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে তদন্তকারীরা, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া মেডিকেল ভবন ধসের ভয়াবহ অনিয়মের চলছে তদন্ত

ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের ভারে ভেঙে পড়া নির্মাণাধীন ভবন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাদ ঢালাইয়ের সময় ভবনের ছাদ ধসের ঘটনায় আরও দুটি তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টানা ঘটনাস্থলে থেকে সবকিছু খতিয়ে দেখেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব (অডিট) মো. ইমরুল চৌধুরী। এ ছাড়া গণপূর্ত বিভাগের দুজন সিনিয়র সহকারী সচিবও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় কুষ্টিয়া গণপূর্তের কর্মকর্তা ও ঠিকাদার উপস্থিত ছিলেন। এদিকে গণপূর্তের কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই ছাদ ধসের ঘটনা বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সকালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. ইমরুল চৌধুরী। বিকাল পর্যন্ত তিনি টানা ঘটনাস্থলে ছিলেন। কাজের সব ডকুমেন্ট তিনি এ সময় জব্দ করেন। ডিজাইনও তলব করেন তিনি। এ সময় তিনি সবকিছু খতিয়ে দেখেন। বিকালে ঢাকায় যাওয়ার আগে কথা হলে অতিরিক্ত সচিব মো. ইমরুল চৌধুরী বলেন, ‘অনিয়ম ও গাফিলতি ছিল বলেই ছাদ ভেঙে পড়েছে। সবকিছু দেখেছি। ঢাকায় ফিরে আগামীকাল (আজ) প্রতিবেদন দাখিল করব। এ বিষয়ে কোনো ছাড় হবে না। অ্যাকশন টু অ্যাকশন নেওয়া হবে।’ দুপুরে কাজের ঠিকাদার জহুরুল ইসলাম, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল আজম ও কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী রশিদকে তলব করা হয়। ছাদ ঢালাইয়ের দিন গণপূর্তের এসও রশিদের দায়িত্ব ছিল কাজ দেখার। তদন্ত দলের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঠিকাদারের কিছু গাফিলতি তো ছিলই। তবে বড় গাফিলতি ছিল গণপূর্তের। ছাদ ঢালাইয়ের আগে শাটারিংয়ের কাজ হয়েছে। সেখানটা প্রস্তুত করতেও ৮ থেকে ১০ দিন লেগেছে। গণপূর্তের কর্মকর্তাদের সামনেই এসব কাজ হয়েছে। তারা তখন এ বিষয়ে কোনো নজরদারি করেননি। সংশ্লিষ্ট উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) এর দায় এড়াতে পারবেন না। এ ছাড়া টানা এক বছর যেসব ঢালাইকাজ হয়েছে তা রেজিস্টারে তোলা হয়নি। এটা বড় অনিয়ম।’ এদিকে কথা হলে ঠিকাদার জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘গণপূর্তের অনুমতি ছাড়া ঢালাই কেন, কোনো কাজই করা হয় না। ঢালাই দেওয়ার সময় তাদের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তাদের অনুমতি নিয়ে সব কাজ করা হয়েছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য সব দায় ঠিকাদারের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার যতটুকু ভুল তা আমি স্বীকার করেছি। এত বড় কাজ হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। তদন্ত দলের সদস্যরা এসেও কাজের প্রশংসা করেছেন।’ এদিকে গণপূর্ত বিভাগের দুই সিনিয়র সহকারী সচিবও গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারাও ঠিকাদার ও গণপূর্তের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত দলের একজন সদস্য বলেন, ‘যাদের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি যে অনিয়ম হয়েছে তার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গণপূর্তের কয়েকজন কর্মকর্তার গাফিলতি ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আর ঠিকাদারকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার কাছ থেকে লিখিত নেওয়া হয়েছে।’ এদিকে গতকাল দুপুর থেকে ধসে পড়া অংশের জঞ্জাল সরানো শুরু করেছে ঠিকাদারের লোকজন। মেশিন লাগিয়ে এসব ধসে পড়া অংশের মালপত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নতুন করে অনুমতি পাওয়ার পর কাজ শুরু করা হবে।’ গণপূর্তের একটি সূত্র জানিয়েছে, কাজে অবহেলার কারণে নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল হান্নান খানসহ কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হতে পারে। এ প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া কয়েকজন এসও দীর্ঘদিন কুষ্টিয়ায় অবস্থান করছেন। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিডি ডা. আশরাফুল হক দারা বলেন, ‘শনিবার দুটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। টিমের সদস্যরা বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঢাকায় ফিরে তারা প্রতিবেদন দাখিল করবেন।’ প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনের নির্মাণাধীন ছাদ ধসে পড়ে। এতে নিহত হন বজলুর রহমান (৬০) নামে এক শ্রমিক। আহত হন আরও চারজন।

সর্বশেষ খবর